অনেক বছর আগেকার কথা।
মানুষ তখনও-
দর্শন শাস্ত্র লিখে উঠতে পারে নি
বিচার শাস্ত্র লিখে উঠতে পারে নি
বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে নি।
অথচ চলার পথে-
মানুষ লোভের সম্মুখীন হলো, ক্ষোভের সম্মুখীন হলো, হিংসার সম্মুখীন হলো।
মাঝে মাঝে মানুষ এমন সমস্যার সম্মুখীন হলো-
তখন কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল;
তা নির্ধারণ করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়লো।
শুরু হলো অরাজকতা।
ধরো এমন এক যুগে,
তুমি সেই দেশের বুদ্ধিদীপ্ত মোড়ল!
তখন তুমি কি করতে?
তুমি আর তোমার সহযোগীরা,
তোমাদের বুদ্ধি আর বিবেচনা অনুযায়ী,
তোমাদের দেশের জন্য একটা নিয়মের বই লিখতে।
কিন্তু বই লেখা তখন হতো না।
তাহলে তখন তুমি কি করতে?
তখন তুমি অলিখিত নিয়ম কানুন তৈরী করতে।
নিয়ম তো বানালে।
কিন্তু তা পালন করতে, মানুষকে উদ্দীপ্ত করবে কি করে?
তুমি শুরু করলে-
ধর্ম আর পাপ পুণ্যের নিয়ম।
তুমি ঈশ্বরের সাহায্য নিলে।
তুমি ঘোষণা করলে-
'যে অন্যায় করবে, ঈশ্বর তাকে তেলের কড়াইয়ে, ফুলুড়ি ভাজা করবে।'
মানুষ মহানও বটে, হারামিও বটে।
কিছু মানুষ আছেন, যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজে নিজেই মহান।
কিছু মানুষ আছেন, যারা ধর্মের চাপে পড়ে মহান।
আর কিছু মানুষ আছেন, যারা সব সময়ই হারামি।
ঈশ্বরকে ভয় করা তো দূরের কথা,
তারা ঈশ্বরের রক্তে তেলে ভাজা ভেজে
মুড়ি মেখে খায়।
মানুষের চরিত্র গঠনে, ধর্মের ভূমিকা অনস্বীকার্য্য।
কিন্তু পূর্বোক্ত কিছু হারামির কারনে, ধর্ম বদনাম পায়।
সব ধর্মই তখন বদনাম পায়।
তুমি হাজার বছর আগে লিখেছিলে সেই সব নিয়মাবলী।
তার পরে কত নদী জন্মেছে আর মরেছে।
কত পাহাড় জন্মেছে আর ধ্বংস হয়েছে।
সেই মান্ধাতা আমলের নিয়ম
এখনও কি চলতে পারে?
সেই সব নিয়মের তাই, পুণঃপুণঃ সংস্কার চাই।
যে সব ধর্মসম্প্রদায় তাদের ধর্মকে সংস্কার করতে পেরেছে,
সেই সব জাতি এগিয়ে যাচ্ছে।
আর যে সব ধর্মসম্প্রদায় তা পারে নি,
তারা এখনও অন্ধকারে আছে।
কেন কোন জাতি, গাদাগাদি নোবেল প্রাইজ পায়
আর কোন জাতি
কেবল 'আমেরিকার ষড়যন্ত্র' বলে নিজদের পিঠ চাপড়ায়?
কেন কোন জাতির- আইনস্টাইন আছে, নিউটন আছে, মাইকেল এঞ্জেলো আছে
আর কোন জাতি কেবল রক্তপাতেই লিপ্ত?
কেন
কোন জাতি আমেরিকাকে দিনরাত খিস্তি করে;
অথচ তারাই
নিজেদের আন্ডারপ্যান্টটা আমেরিকার তৈরী বলে,
গর্বে আস্ফালন করে?
নিজেদেরকে কখনো, সে প্রশ্ন করেছো?
তার উপর জাতিতে জাতিতে রেষারেষি।
একজাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য,
ধর্মকে হাতিয়ার করলো।
তারা ধর্মের এমন সব ব্যাখ্যা করলো,
যাতে তারা অন্য জাতির প্রতি ঘৃণা গড়ে,
তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূর্ণ করতে পারে।
ধর্ম তখন আর ধর্ম থাকলো না,
তখন ধর্ম হয়ে গেলো এক কূটনৈতিক যুদ্ধশাস্ত্র।
আজকের দিনেও
ধর্ম আছে, ধার্মিকও আছেন।
সব ধর্মেই তারা আছেন।
তবে কোন কোন ধর্ম যেহেতু, নিজেদেরকে একদমই সংস্কার করে নি,
তাই সেই সব ধর্মের মানুষ, বড় বেশি আঁধারে রয়ে গেছেন।
তারা কেবল ধ্বংস আর রক্তপাতে লিপ্ত।
তা কিন্তু খুবই দুঃখজনক।
এখানে, কোন ধর্মের নাম আমি করবো না।
তাতে আমি তাদেরকে আঘাত করবো।
তাতে ক্ষতি ছাড়া, কারুরই কোন লাভ হবে না।
তাই আমি চাই-
প্রত্যেক ধর্মের মানুষ, তাদের নিজেদের ধর্মকে নিয়ে ভাবুক,
আর প্রয়োজনীয় সংস্কার করুক।
তাতে তারা নিজেরা, আরও বেশি আলো দেখতে পাবেন।
আর এই পৃথিবীও, আরো বেশি আলো দেখতে পাবে।
এতে দোষারোপের খেলা বন্ধ হবে
আর সত্যিকারের সুন্দর সংস্কার ঘটবে।
কিন্তু কোন ধর্ম যদি বিশ্বাস করে,
তারা যা জানে তাই একমাত্র সত্য;
তাহলে ঈশ্বরেরও, চোখের জল ফেলা ছাড়া
কোন কিছু করার থাকে না!
মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে।
এক নক্ষত্র মরছে, নতুন নক্ষত্র জন্মাচ্ছে।
এক গ্রহ খসে পড়ছে,
অন্য এক গ্রহ হুঁকো খাওয়ার জন্য আকাশ ভ্রমণে বের হচ্ছে।
ক্ষুদ্র জীবাণু, সেও বদলে যাচ্ছে।
ঈশ্বর নিজেও বদলে যাচ্ছেন!
উনি বুড়ো হচ্ছেন, আবেগ প্রবন হচ্ছেন!
ওনারও ধৈর্য্য চ্যূতি ঘটছে।
তাহলে
মানুষ আর তার বিশ্বাস বদলে যাবে না কেন?
অন্য ধর্মের কথা বলবো না।
কিন্তু আমি আমার হিন্দু ভাইদেরকে বলছি-
হে ভাই, স্মরণ করো
আর্যভট্ট তোমার পিতা
যিনি আইনস্টাইন বা নিউটনের চেয়ে এক কণা কম ছিলেন না।
তিনি তখনকার দিনে
মাটিতে বসে মহাকাশকে হাতের পাঞ্জার মতো চিনতেন।
অথচ ভারতের আজ এতো দুর্দিন কেন?
হিন্দুদের এতো দুর্দিন কেন?
নিজেকে আগে চেনো।
হিন্দু ধর্মের আচার হিন্দু ধর্ম নয়।
হিন্দু ধর্ম হলো হিন্দু ধর্মের দর্শন।
বিজ্ঞান এখনো যা পারে না, হিন্দু দর্শন তার উত্তর দিতে পারে।
মানুষের এতো যন্ত্রণা কেন? তার নিরাময় কি?
এসবের উত্তর দিতে, বিজ্ঞান খেই হারিয়ে ফেলে।
অথচ হিন্দু দর্শন সে উত্তর অবলীলায় দেয়।
কাজেই তোমরা
পশু বলির প্রথায় আবদ্ধ থেকো না
পণ প্রথার আঁধারে বসে চোখের জল ফেলো না
গোমূত্রের মধ্যে ঈশ্বর দর্শন খুঁজো না।
তোমরা যদি সত্যিকারের হিন্দু হতে চাও
হিন্দু ধর্মের দর্শনকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাও।
অন্য ধর্ম সম্প্রদায় আঁধারে আছে বলে
তোমাকেও যে আঁধারে থাকতে হবে
সেই লিপ্সা তুমি সম্বরণ করো।
সমগ্র জগৎ কেন মেডিটেশনকে
এতো বেশি আঁকড়ে ধরছে?
সমগ্র জগৎ কেন যোগব্যায়ামকে
এতো বেশি আঁকড়ে ধরছে?
সমগ্র জগৎ কেন বুদ্ধ দর্শনকে
এতো বেশি আঁকড়ে ধরছে?
কারন হিন্দু ধর্মে আছে
মানুষের যন্ত্রণা মুক্তির উপায়।
মানুষের যন্ত্রণা যতদিন থাকবে
ততদিন হিন্দু ধর্ম থাকবেই থাকবে।
শুধু পৃথিবী কেন, অন্য ধর্ম- মহাকাশ দখল করে নিলেও
হিন্দু ধর্ম দিব্যি হুঁকো টানতে টানতে থাকবে।
কাজেই টেনশন তোমরা করো না,
তোমরা বটুর দোকানে বসে,
হুঁকো টানতে টানতে তামাশা দেখো এ পৃথিবীর।
যারা আঁধারে থাকতে চায়,
তাদেরকে আঁধারে থাকতে দাও।
হিন্দু ধর্মে যে রত্নভাণ্ডার আছে
তা তোমরা নিজেরাই জানো না।
সেই রত্নভাণ্ডার হিন্দু দর্শনে আছে
গোমূত্রে নয়।
© অরুণ মাজী
Painting: Andrew Atroshenko
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem