যারা বেশ্যা তারা কি জানে- তারা বেশ্যা হয়ে গেছে? Poem by Arun Maji

যারা বেশ্যা তারা কি জানে- তারা বেশ্যা হয়ে গেছে?

Rating: 5.0

যারা বেশ্যা হয়ে যায়, তারা কি বুঝতে পারে- তারা বেশ্যা হয়ে গেছে? (এখানে বেশ্যা= চরিত্র বেশ্যা। সোনাগাছির নারীরা নয়, তারা আমার মাতৃতুল্য, তারা আমার প্রণম্য।)

সাইকোলজিস্টরা গবেষণা করে অদ্ভুত এক উত্তর খুঁজে পেলো। বেশ্যারা জানতেই পারে না- কখন তারা বেশ্যা হয়ে গেছে! বরং তারা- তাদের এই অবনমনকে অস্বীকার করে (একে বলে DENIAL) , অথবা তারা তাদের অবনমনকে, কল্পনা আর মিথ্যে দিয়ে ব্যাখ্যা করে/সমর্থন করে (একে বলে JUSTIFICATION) ।

পুরানো দিনে- বাংলাতে, খবরের কাগজ আর সাংবাদিকতা বলে, ভালো একটা কিছু ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা হারিয়ে গেছে। আজ যা দেখি- তা কোন এক বেশ্যা রমণীর, নাগর বুকে উল্লাস আর শীৎকার! কিন্তু কাগজ কি জানে- তারা বেশ্যা হয়ে গেছে? কাগজ কি জানে- তাদরেকে জনগণ বেশ্যা বলে ডাকে? কাগজ কি জানে- জনগণ তাদেরকে বিন্দুমাত্রও বিশ্বাস করে না?

নাহঃ জানে না। কেন জানে না? উপরের মনস্তাত্ত্বিক নীতি তার কারন।

তোমরা আমাকে প্রশ্ন করবে- কাগজ যদি বেশ্যা হয়ে গেছে, তাহলে জনগণ এখনো কাগজ পড়ে কেন? ধরো, তোমার প্রতিবেশীর ঘর থেকে রাতের বেলা, নারী কণ্ঠের 'আঁ' 'আঁ' শীৎকার ভেসে আসে। তুমি জানো- তোমার প্রতিবেশিনী ঘৃণ্য, নোংরা। তবুও তুমি রাতের বেলা তোমরা জানালা খুলে দাও। কেন? কারন- 'আঁ' 'আঁ' শীৎকারে, তোমার মধ্যেও দারুন রোমাঞ্চ জাগে। তুমি তাই তোমার প্রতিবেশীনীকে ঘৃনাতে গালি করলেও, তার শীৎকার শুনতে তুমি ঘরের জানালা খুলে দাও।

ঠিক সেই একই কারনে, জনগণ- আজও কাগজ পড়ে। কেবল পড়ে না, কাগজ পরিবেশিত নোংরামি, তারা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে।

যন্ত্রণা হয় গো, বুকে বড় যন্ত্রণা হয়! আমি দেখি, বিখ্যাত কাগজগুলো- তাদেরকে নীচে নামাতে নামাতে, এখন এক্কেবারে হীন বেশ্যা পর্যায়ে নিয়ে গেছে। অথচ এদেরই পূর্বপুরুষ, কাগজ আর সাংবাদিকতার ঐতিহ্যকে, তাদের রক্ত আর ত্যাগ দিয়ে, অনেক উঁচুতে স্থান দিয়েছিলেন। ছিঃ ছিঃ আপন পূর্বপুরুষদেরকে, কি সাংঘাতিক অপমান! আপন বাপ ঠাকুরদার প্রতি কি নেমকহারামি! জনগণের প্রতি কি সাংঘাতিক তাচ্ছিল্য!

সাংবাদিকতা হলো- যা কিছু ঘটে, তা পর্যবেক্ষণ করা; তাদেরকে আরও বিভিন্ন সূত্র থেকে যাচাই করা; তারপর তাকে জনগণের কাছে- নিরপেক্ষভাবে পরিবেশন করা। কোন ঘটনার পুরো সত্য না জানা থাকলে, তা সরাসরি স্বীকার করে নেওয়া। যেমন ঘটনা, তাকে ঠিক তেমনি ভাবে জনগণের কাছে পরিবেশন করা। কোন সম্পাদক কখনো- নিজের ধারণা বা বিশ্বাস বা মতকে, জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে পারেন না। কাগজের যারা কলামনিস্ট (প্রবন্ধক) আছেন, তারা অবশ্য তাদের নিজেদের মত, ব্যক্তিগত দায়িত্বে পরিবেশন করতে পারেন। কিন্তু কাগজ তা পারে না।

কিন্তু আজকাল আমরা কি দেখছি? কাগজগুলো- সরকারের, বা বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের বিজ্ঞাপন হয়ে গেছে। এই প্রবন্ধ লেখার আগে, আমি কয়েকটা বিখ্যাত বাংলা কাগজ পড়লাম। তাদের পরিবেশিত খবরের একটা খবরকেও আমার সত্য বলে মনে হয় নি। কোনটা ডাহা মিথ্যে, কোনটা অতিরঞ্জিত গল্প, কোনটা কারও বিপক্ষে ষড়যন্ত্র! ভাবতে পারো- ব্যক্তিগত ষড়যন্ত্রে, কাগজও সামিল? কি নিদারুন অধঃপতন সাংবাদিকতা আর সংবাদপত্রের!

তবুও আমি বিশ্বাস করি- ভালো সাংবাদিক এখনো আছেন। কিন্তু সহস্র নেকড়ে মাঝে, একা সাধু কি হরিনাম গাইতে পারে? কাজেই, সেই সাধুকেও, নেকড়ের মতো রক্তপান করতে হয়! হে ঈশ্বর, আমাদেরকে ক্ষমা করো! আমাদেরকে একটু আলো দাও!

প্রবন্ধঃ অরুণ মাজী

যারা বেশ্যা তারা কি জানে- তারা বেশ্যা হয়ে গেছে?
Tuesday, October 17, 2017
Topic(s) of this poem: politics,truth
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success