প্রশ্ন: কোরান ও হাদীছের আলোকে শবে বারাত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিন্তু কম্প্রিহেন্সিভ আলোচনা করবেন যাতে সম্পুর্ন বিষয়টা সন্দেহাতীত ভাবে বুঝে আসে।
উত্তর: ইসলামি শরিয়তের প্রাইমারি সোর্স হচ্ছে- কোরান ও হাদীছ।
এর পরে রয়েছে ইজমা ও কিয়াছ।
হাদীছ কোরানি আয়াতের ব্যখ্যাও করে এবং আয়াতের অর্থকে খোলাসাও করে। অনেক সময় কোরান করীম কোন একটি বিষয়কে পরোক্ষভাবে বা ভাসা ভাসা ভাবে ইংগিত করে কিন্তু হাদীছ শরীফের কল্যাণে সেই ধোয়াশে ভাবটা আয়াতের মধ্যে আর থাকেনা।
শবে বারাতের ব্যপারে পবিত্র কোরানে পাকের সুরা দোখ্খানে আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন:
হা মীম। এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ। নিশ্চয়ই আমি কোরান অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। উক্ত রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফায়সালা করা হয়" (আয়াত ১-৪)
অত্র আয়াতে বর্ণিত "লাইলাতুম মুবারাকাহ্"র ব্যখ্যায় তাবেয়ীনদের মধ্যে তাফসীরের অন্যতম ইমাম হযরত ইকরামা (রাঃ)সহ অনেক মুফাস্সিরগণ শবে বারাতকে বুঝানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
তবে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ)সহ অনেকে বলেছেন এখানে শবে কদর উদ্দেশ্য।
আয়াতের এই শব্দ দিয়ে বহুসংখ্যক তাফসিরের ইমামদের রায় সত্তেও শবে বারাত নিরংকুশভাবে প্রমাণিত না হলেও হাদীছ শরীফে অসংখ্য সাহাবায়ে কিরাম থেকে বর্ণিত অনেক হাদীছ রয়েছে যা শবে বারাতকে সন্দেহাতীত পন্থায় প্রমান করে।
শবে বরাতের ফজিলতের উপর আয়িম্মায়ে হাদীছ অসংখ্য হদীছ বর্ণনা করেছেন। শুধু যে হাদীছ বর্ণনা করেছেন তা নই, বরং স্ব-স্ব হাদীছের কিতাবে এই বিষয়ে আলাদা 'অধ্যায়' করেছেন। এই জিনিসটা একাডেমিক ক্ষেত্রে মেটার করে। কারণ 'অধ্যায়' করা মানে বিষয়টা ঐ যুগেই বহুল প্রচলিত এবং গুরুত্ববহ।
যেই সমস্ত আঈম্মায়ে হাদীছ শবে বরাত সংক্রান্ত হাদীছ স্ব-স্ব কিতাবে বর্ণনা করেছেন:
- ইমাম ইবনে মাজাহ্
- ইমাম তিরমিঝি
- ইমাম আহমদ বিন হাম্বল
- ইমাম আব্দুর রাজ্জাক
- ইমাম বাইহাকি
- ইমাম বাঝ্ঝার
- ইমাম ইবনে হিব্বান
- ইমাম তাবরানি
- ইমাম মুহাম্মদ
- ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি
আমি শুধু দুয়েকটি হাদীছ আপনাদের সাথে শেয়ার করব:
- "হুজুর (দঃ)এরশাদ করেন: শবে বরাতের রাতে আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান এবং মুশরিক ও অন্যের প্রতি হিংসা পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।"
এই হাদীছটি ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা সুত্রে আটজন জলিলুল কদর সাহাবি বর্ণনা করেছেন। তাঁরা হচ্ছেন:
- হযরত আবু বলে ছিদ্দীক (রাঃ)
- হযরত আলী (রাঃ)
- হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রাঃ)
- হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ)
- হযরত আবু মুছা আশয়ারী (রাঃ)
- হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)
- হযরত আউফ বিন মালিক (রাঃ)
- হযরত আবু ছা'লাবা (রাঃ)
মুহাদ্দেসীন এই হাদীছকে সহিহ্ বলেছেন।
এমনকি বর্তমান যুগের সলফীদের হাদীছে পাকের ক্ষেত্রে একমাত্র মুরব্বি শায়খ আলবানিও এই হাদীছকে নিঃসন্দেহে সহিহ্ বলেছেন (দেখুন: শায়খ আলাবানি কৃত "সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহিহা" খন্ড: ৩, পৃ: ১৩৫, হাদীছ নং: ১১১৪)
স্বাভাবিক ভাবেই বর্ণনা সুত্র বেশি হওয়ার কারণে কোন একটা সুত্রে সমস্যা থাকলেও অন্য বর্ণনা সুত্রের সাপোর্টের কারণে তা দুরিভূত হয়ে যায়।
"হযরত আলী (রাঃ)হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসুল (দঃ)বলেছেন:
যখন শাবানের মধ্যবর্তী রাত তথা শবে বরাত আসবে তখন তোমরা ঐ রাত জেগে ইবাদত কর এবং এর পরদিন রোজা রাখ। কেননা আল্লাহ্ তায়ালা ঐদিন সুর্যাস্তের পর (নীজ শান অনুযায়ী)দুনিয়ার আসমানে আবিভূত হয়ে আহবান করেন: তোমাদের মধ্যে কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি?
আমি মাফ করে দেব। রিজিকের প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি বিপদ থেকে মুক্তি দিব। এভাবে ফজর পর্য্যন্ত আরো বান্দাদের সম্বোধন করতে থাকেন।"
(ইবনে মাজা, শাবানের মধ্যবর্তী রাত তথা শবে বরাত অধ্যায়, হাদীছ নং: ১৩৮৮)
এমনকি ইমাম মুহাম্মদের মত জলিলুল কদর ইমামও স্বীয় কিতাব "কিতাবুস সুন্নাহ্"-ই শবে বরাতের উপর অধ্যায় রচনা করে হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
-প্রখ্যাত সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ)বলেন:
"পাঁচটি রাতের দোয়া ফেরত দেওয়া হয়না।(অর্থাত্ এই রাত গুলোর দোয়া কবুল হয়) । রাতগুলো হলো জুমার রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত তথা শবে বরাত এবং দুই ঈদের রাত"
(ইমাম তাবরানি, মু'জামুল আওছাত, হদীছ নং ৬৭৭৬, হযরত মুয়ায বিন জাবাল
ইমাম আব্দুর রাজ্জাক, মুসান্নাফ, নং ৭৯২৭, হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রঃ))
এছাড়াও দুনিয়া ব্যাপি বহুল পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য হাদীছের কিতাব "মিশকাতুল মাসাবীহ্"-এ "বাবু কিয়ামে শাহরে রামাদান" অধ্যায়ে শবে বারাতের উপর চারটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। এই হাদীছ গুলোর মাধ্যমে হুযুর (দঃ)এর রাত্রিকালীন ইবাদতেরও বর্ণনা পাওয়া যায়।
এর পরেওকি বলবেন শবে বরাত কোথাও নেই? ? ?
(kopi)
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem