সেই কবে ছেড়ে এসেছি বেলঘরিয়া
বেলঘরিয়ায় আর আমার বাড়ি নেই
মেয়েদের কোনো নিজস্ব স্থায়ী বাড়ি হয় না
আমার স্কুলে যাওয়ার পথে পিসেমশাই-এর মুদি দোকান ছিল
খেলার সাথী পাড়ার ঝর্ণার পিসেমশাই মানে আমাদের সকলের পিসেমশাই
মা কিছু কিনতে দিলে খুব উৎসাহে দোকানে যেতাম
দোকানে যাওয়ার জন্য আমার এক আলাদা আকর্ষণ ছিল
যাই কিনি না কেন, পিসেমশাই আমাকে এক খুঠো চানাচুর খেতে দেবে
তারজন্য কোনো পয়সা নিত না।
বলত-‘এর জন্য তোমাকে পয়সা দিতে হবে না, আহ্লাদী'
পিসেমশাই আমাকে আহ্লাদী বলে ডাকত।
পাড়ার সমবয়সীদের সাথে দোকানের সামনে থেকে যখন খেলতে যেতাম
দেখতে পেলে আমাকে ডেকে বলত ‘ওদের সাথে তুমি যাবে না।
তোমাকে ওদের সাথে মানায় না, তুমি কত সুন্দর জান? '
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে একটু একটু করে বড় হচ্ছি
দোকানে গেলে এখন পিসেমশাই অন্য কথা বলত
‘শোনো আহ্লাদী, তোমার কত সুন্দর এক ঢাল কাল লম্বা চুল
তোমার বিয়ে হবে খুব বড় বাড়িতে, খুব ভাল হবে'
তখন আমার খুব লজ্জা করতো।
বড় হয়ছি স্কুলের গন্ডি পার করে কলেজে যাই
পিসেমশাই-এর দোকানের সামনে দিয়েই ষ্টেশনের পথ
দেখতে পেলেই ডেকে বলবে ‘কোথায় যাচ্ছ? '
কলজে যাচ্ছি জেনে ক্যাশ থেকে দু'টাকা দিয়ে বলত
‘এই নাও টাকা তোমার বাবার নামে লিখে রাখবো
তুমি হেঁটে ষ্টেশনে যাবে না, তোমার হেঁটে যাওয়া মানায় না।
শোনো আহ্লাদী-সবাই যা করে তোমাকে সেটা মানায় না
তুমি যেমন তেমন জায়গায় যাবে না যেমন তেমন ভাবে যাবে না।‘
একদিন পিসেমশাই মরে গেল দোকানও বন্ধ হয়ে গেছে।
পিসেমশাই-এর কথা মত ভাল বিয়ে হয়েছে আমার, বাড়িটিও বড়।
একটি সরকারি চাকরিও করি।
এখন কোনো মঞ্চ যখন আমাকে আমন্ত্রন জানায়
যখন অভিযানে যাই কৈলাস মানস সরোবরে,
ওপর থেকে পিসেমশাই দেখে নিশ্চয় খুব খুশী হয়।
আমি তো যেমন তেমন জায়গায় যাই না
যেমন তেমন ভাবে চলি না।
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem