মানুষের চরম দুর্ভাগ্য, মানুষ "রাজনীতি" নামে এক মৃত্যুযন্ত্র আবিষ্কার করেছিলো। পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখো। যেখানেই রাজনীতি- সেখানেই ধ্বংস, সেখানেই মৃত্যুর মিছিল, সেখানেই মানুষের হাহাকার।
অন্যায়ের প্রতিবাদ করলো বলে, সরকার সেই সব প্রতিবাদী মানুষকে হত্যা করলো?এ কোন ব্রিটিশ শাসিত জালিয়ানওয়ালাবাগ নয়। এ কোন ব্রিটিশ শাসিত সাউথ আফ্রিকা নয়। এ ঘটনা ঘটলো আমাদের স্বাধীন ভারতে।
যারা হত্যা করলো, তারা আমাদের ভাই? যারা হত্যা করলো, তারা আমাদের ভোটে জেতা সরকার?
রাজনীতিকরা কেবল মূর্খ ভোঁদড় নয়। তারা হিংস্র লোভী ভয়ঙ্কর এক জানোয়ার। "তুতিকোরিন ঘটনা" সবার চোখের সামনে আরও একবার প্রমাণ করলো- রাজনীতি এবং রাজনীতিকরা মানুষের কল্যাণযন্ত্র নয়, তারা নৃশংস এক মৃত্যুযন্ত্র। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকাও, সেখানে তো সেই একই রকম গণহত্যা।
যে তন্ত্র মানুষকে হত্যা করে, মানুষকে আজীবন যন্ত্রণার দিকে ঠেলে দেয়, সেই তন্ত্রতে মানুষের কি কোন প্রয়োজন আছে? মানুষ তাই রাজনীতি আর রাজনীতিকদেরকে, নর্দমায় ছুঁড়ে ফেলবে না কেন?
দুর্ভাগ্য! পন্ডিত-মূর্খ, ধনী-দরিদ্র্য সবাই আজ সাধারণ ন্যায় বোধটুকু হারিয়ে ফেলেছে। কোন এক ব্যক্তি, কোন রাজনৈতিক দলের অনুরাগী হলে, সে তার দলের হত্যাকেও সমর্থন করতে চায়। এই সমর্থন ঘটে কখনো নীরবে, কখনো সরবে।
পন্ডিত অন্ধ, স্বার্থ আর লোভের ছানিতে। দুর্বল অন্ধ, অশিক্ষার ছানিতে। আমরা সবাই তো অন্ধ। গণহত্যার মধ্যেও, আমরা কোন অন্যায় দেখতে পাই না? হে ঈশ্বর, চিমটি কেটে দেখো তো, আমি বেঁচে আছি কিনা?
আমার বাবাকে আমি ভালোবাসি, তার মানে এই নয় যে, আমার বাবার কোন ভুল কাজকে আমি ভুল বলবো না। এই সামান্য বুদ্ধি আর চেতনা যদি আমার না থাকে, আমি কি মানুষ হওয়ার যোগ্য?
আজকের রাজনীতিতে সকলেই শকুন। মোদীজী বা মমতাদি- কেউই এর ব্যতিক্রম নয়। যেমন ব্যতিক্রম নয় ইন্দিরা গান্ধী বা জ্যোতি বসু।
ভারত অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়েছে। কিন্তু গ্রামের সাধারণ মানুষ? আজও আমি আমার গ্রামে গিয়ে দেখি, সেই একই রকম অশিক্ষা, সেই একই রকম বেকারত্ব, সেই একই রকম অন্ধসংস্কার, সেই একই রকম মদ্যপ পুরুষ দ্বারা, অসহায় মেয়েদের উপর অত্যাচার।
কিছু বেশি মানুষ হয়তো গাড়ি চড়ছে, গ্রীষ্মকালে তারা ঠান্ডা হাওয়া খাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা আজও রক্তাল্পতা, অপুষ্টি, রুগ্নতায় ভুগছে। মানুষের উন্নতিটা তাহলে হলো কোথায়? ভরা পেট যাদের, তারাই আজ মাছের বদলে বেশি করে মাংস খাচ্ছে। কিন্তু আমার গ্রামের জগাই আর তার বৌ? তারা তো আজও একবেলা উপোষ করে মরে।
আজও, ভারতের উন্নতির বেশীরভাগটা কেবল রাজনীতিক আর ক্ষমতাশালীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তারাই দেশ আর দেশের মানুষকে ক্রমাগত শোষণ করে যাচ্ছে। ৯ বছরের এক শিশু দোকান থেকে রুটি চুরি করলে, আমরা সেই শিশুকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে খুন করি। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করা- বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী, সুব্রত রায়, সারদা মাতা- এরা এখনো বুক উঁচু করে ঘুড়ে বেড়ায়।
তাহলে গনণতন্ত্রটা কোথায়? আমি সাধারণ এক মানুষ, একা তো আর লড়াই করতে পারি না। আমি তাই নীরবে কাঁদি। কান্নাটা বুকে খুব বেশি চেপে বসলে একটু লিখে ফেলি। নিজের যন্ত্রণায় আমি কখনো আত্মহত্যা করতে চাই না। কিন্তু মানুষের এই যন্ত্রণা দেখে, সত্যিই আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে।
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem