যন্ত্রণা মুক্তির রহস্য (Essay On Human Sufferings) Poem by Arun Maji

যন্ত্রণা মুক্তির রহস্য (Essay On Human Sufferings)

Rating: 5.0

জীবনকে কি এক মুহূর্তেই বদলে দেওয়া যায়? আলবৎ যায়। হাজারবার যায়।

জীবনে, শান্তি আর অশান্তির দূরত্ব এক ঈঞ্চিরও কম! সেই দূরত্ব অতিক্রম করতে তোমাকে বছর বছর তপস্যা করতে হবে না। চাইলে, সেই দূরত্ব, তুমি এই মুহূর্তেই অতিক্রম করতে পারো । কিভাবে?

মাছের সঙ্গে মশলা দিলে, তবে মাছের ঝোল হয়। একলা মাছ বা একলা মশলা দিয়ে মাছের ঝোল হয় না। তোমার চিন্তা আর তার সাথে তোমার কর্ম- এই দুই মেশালে, তবে একটা সুন্দর শান্তিময় জীবন হয়। কি সেই চিন্তা আর কর্ম, যা তোমাকে শান্তি দেবে?

হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে তুমি যা চাও, তুমি তাই পাও। তুমি বলবে- 'আমরা সবাই তো শান্তি চাই, তবে তা পাই না কেন? ' সত্যিই কি তাই? সত্যিই কি তুমি শান্তি চাও?

অমলকে একদিন তার 'বস' বললো- 'তুই বরং সামনের মাস থেকে, কলকাতার অফিস ছেড়ে, রাঁচির অফিসে কাজ কর। তোকে মাসে কুড়ি হাজার টাকা বেশী মাইনে দেবো।'

কুড়ি হাজার টাকা! অমল এক লাফে রাজী। কলকাতাতে, সে তার বৌ বাচ্চাকে ফেলে রাঁচিতে হাজির। প্রথম মাস যায়, দ্বিতীয় মাস যায়। আর তারপরই অমলের হৃদয়টা, কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে। মনটা কেবল ভারী ভারী। বুকটা কেমন ব্যথা ব্যথা। একদিন অফিস থেকে বাসাতে ফিরে, বেচারা তো কেঁদে অস্থির; বৌ আর বাচ্চাকে, তার- বড় বেশী মনে পড়ে!

যন্ত্রণা কাটাতে, তার মদ খাওয়া শুরু। ছমাসের মাথায় মদ খাওয়া বেড়ে গেলো। একদিন মাতাল অবস্থায়- ফোনে, বৌকে সে গালি করলো। পরদিন বিকেলে- বৌ তার, রাঁচির বাড়িতে হাজির। বৌ দেখে- ঘরের মধ্যে কেবল মদের বোতল আর মদের বোতল। বৌ তো রেগে কাঁই! তুমুল ঝগড়া। রাগের মাথায় অমল তার বৌয়ের গায়ে হাত দিয়ে ফেললো। বৌ-ও রাগের মাথায় পুলিশে খবর দিলো। তিন মাস পর কলকাতা কোর্টে ডিভোর্সের আবেদন!

কুড়ি হাজার টাকা, আর ডিভোর্সের দূরত্ব খুব বেশী নয়! অমল বলে- 'বৌ আর বাচ্চাকে, বেশী সুখ আর শান্তি দিতেই তো, আমি তাদেরকে ছেড়ে রাঁচিতে গেলাম! ' সত্যিই কি তাই? ভাবো তোমরা- জীবনে, শান্তি আর অশান্তির রহস্য কিন্তু এখানেই লুকিয়ে। অমল কি মিথ্যে বললো?

কি সেই চিন্তা, যা মানুষের শান্তির গতিপথ নির্ধারণ করে?

জীবনটা একটা সমুদ্রযাত্রা
আর তুমি এক নাবিক!
গন্তব্য জানলে
আর কম্পাস থাকলে
তোমার জাহাজ ডুববে না।

আর তা যদি না থাকে
কপালে তোমার চরম দুর্দশা!
তোমার মৃত্যু পর্য্যন্ত হতে পারে!

ওঃ তোমাদেরকে বলি নি। ডিভোর্স চলাকালীন, মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হয়ে, অমল আত্মহত্যা করেছে!

যা বলছিলাম- তোমার জীবনযাত্রার, কম্পাস কোনটা? আজ তোমাকে আমি একটা কম্পাস দেবো।

জীবনে, প্রতিমুহূর্তে, একই সঙ্গে তুমি অসংখ্য পথের সম্মুখীন হবে। কোন পথ বাছবে তুমি? অমলের কাছে দুটো পথ ছিলো- বসকে ভেংচি কেটে বলে দেওয়া- 'আমার বৌ বাচ্চা, তোমার কুড়ি হাজারের চেয়ে অনেক বেশী দামী। ' অথবা বলে দেওয়া- 'এই না হলে গুরু আমার! তোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক বস। আজই আমি রাঁচি যাচ্ছি! ' অমল দ্বিতীয় পথটা বেছে নিয়েছিলো। কেন? অমলের উত্তর ছিলো- 'কুড়ি হাজার কি চাট্টি খানি কথা! '

অমল কি একা? আমি চোখের সামনে কোটি কোটি মানুষ দেখতে পাই- যারা কম্পাসহীন সমুদ্রযাত্রী! জীবনে যখন, এরকম অসংখ্য পথের সম্মুখীন হবে, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করো তুমি-
'কোন পথ আমাকে বেশী প্রশান্তির পথে নিয়ে যাবে? ' এই প্রশ্নটাই হলো তোমার জীবনের কম্পাস। যে পথ তোমাকে, বেশী প্রশান্তির পথে নিয়ে যাবে, তুমি কেবল সেই পথে হাঁটবে।

কি সেই চিন্তা আর কর্ম যা তোমাকে শান্তি দেবে? প্রশান্তি জীবনের চরম লক্ষ্য।
জীবনে
জ্বলে পুড়ে ছারখার-ই যদি হয়ে গেলে
কি লাভ তবে ঘাম-রক্ত ঝরিয়ে
আর টাকার পাহাড় গড়ে?


প্রশান্তি ছাড়া আর কোন লক্ষ্যই বড় নয়। হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে এই বিশ্বাস যেদিন তোমার হবে, সেদিনই তুমি শান্তি পাবে। কারন সেদিন তুমি, অমলের মতো লোভে পড়ে, কুড়ি হাজার টাকার জন্য, বৌ বাচ্চা ছেড়ে, রাঁচি দৌড়োবে না।

এই হলো চিন্তা। কর্মটা কি তাহলে? এই চিন্তাকে বারবার তোমার জীবনে প্রয়োগ করা। এই দুটো জিনিস, তোমরা যদি এক মাস তোমাদের জীবনে প্রয়োগ করো, দেখবে- তোমাদের জীবন, বদলে গেছে।

© অরুণ মাজী
Painting: Jia Lu

যন্ত্রণা মুক্তির রহস্য (Essay On Human Sufferings)
Monday, May 8, 2017
Topic(s) of this poem: bangla,human,life,pain,peace,poem,serenity,suffering
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success