একটা মজার প্রশ্ন হল,
বখতিয়ার যদি রাজ্য জয় বা রাজাই হতে চাইবেন
তাহলে পাশের বঙ্গ পুরোটা দখলে না নিয়ে
কেন বহু দূরবর্তী ও অজানা তিব্বত জয়ের লক্ষ্যে রওয়ানা হলেন?
বখতিয়ার খলজির ভারত ও বাংলাদেশে অবস্থান ছিল মোটামুটি ১৫-১৬ বছর। ভাগ্যের সন্ধানে তিনি তাঁর জন্মভূমি (বর্তমান আফগানিস্তান) ছেড়ে ভারতে আসেন। শারীরিকভাবে খাটো এবং এই তুলনায় তাঁর হাত ছিল লম্বা। এসব কারণে তুর্কিদের সেনাবাহিনীতে তাঁর চাকুরী হয় নাই। ভারতে এসেও প্রথমদিকে একই সমস্যায় পরেন তিনি। পরে বহু জায়গায় ঘুরে তিনি বর্তমান উত্তর প্রদেশের অন্তর্গত মীর্জাপুর জেলায় 'ভিউলী এবং ভাগত' নামে দুটো পরগনার দায়িত্ব পান। এখান থেকে তাঁর রাজ্য জয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা শুরু হয়।
১২০৩ সালে তিনি ওদন্তপুরী বিহার জয় করে সেখানে শাসন কায়েম করেন। এক বছর পর তিনি নদীয়া অভিযানে আসেন এবং লক্ষণ সেনের রাজত্বের একটা অংশ দখলে নেন। লক্ষণ সেন ঘটনার আকস্মিকতায় পালিয়ে তাঁর রাজধানী বঙ্গের বিক্রমপুরে চলে গেলে, প্রায় কোন রকম যুদ্ধ করা ছাড়াই নদীয়া অভিযান শেষ হয়। নদীয়া ছিল গঙ্গার (ভাগীরথী ধারা) তীরস্থ একটি পবিত্র তীর্থস্থান। বখতিয়ার সেখানে অবস্থান না করে গৌড়ে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন। লক্ষণ সেন তাঁর নামানুসারে গৌড়ের নামকরণ করেছিলেন লক্ষ্মণাবতী। পরবর্তীতে এটিই মুসলমানদের কাছে লখনৌতি নামে পরিচিতি পায়।
বখতিয়ার তাঁর অধিকৃত এলাকারে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেন এবং প্রত্যেক ভাগে এক একজন সেনাপতি নিযুক্ত করেন। এই শাসনতান্ত্রিক বিভাগকে 'ইকতা' এবং ইকতার শাসনকর্তাকে 'মুকতা' বলা হত। বখতিয়ার রাজনৈতিক শাসন কায়েম করার সাথে সাথে মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকাহ তৈরি করেন। মানুষের মধ্যে তুর্কি মুসলমানদের সামাজিক অবস্থান তৈরির লক্ষ্যেই তিনি এসব করে থাকবেন।
যাই হোক, অল্প কিছু দিন পরেই অর্থাৎ, ১২০৬ সালে তিনি তিব্বত অভিযানে বের হন। এখানে একটা মজার বিষয় হল, বখতিয়ার যদি রাজ্য জয় বা রাজাই হতে চাইবেন তাহলে পাশের বঙ্গ পুরোটা দখলে না নিয়ে কেন বহু দূরবর্তী ও অজানা তিব্বত জয়ের লক্ষ্যে রওয়ানা হলেন? এই প্রশ্নের উত্তর মেলে না। এই অভিযানই তাঁর জীবনের ইতি টেনে আনে। প্রায় ১০ হাজার সৈন্য বাহিনী নিয়ে তিনি আসামের স্থানীয় রাজার সাথে লড়াই লিপ্ত হন। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে তিনি লখনৌতিতে ফিরতে চাইছিলেন। কিন্তু নদীতে সাতারে অভ্যস্ত না থাকায় তাঁর পুরো বাহিনীই পানিতে তলিয়ে যায়। মাত্র ১০০ জন সৈন্য নিয়ে তিনি দেবকোটে ফিরে আসেন। এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অসুস্থ অবস্থায় তাঁর এক সেনার হাতে নিহত হন।
(status muldhara/ আবদুল করিম, 'বাংলার ইতিহাসঃ সুলতানী আমল' থেকে তথ্য সংগৃহীত)
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem