তোমরা যদি ঝাঁটা নিয়ে তাড়া না করো তো তোমাদেরকে ভয়ানক মহৎ এক উপদেশ দিই। তোমরা এখন থেকে বেশি বেশি বকবাস করতে শেখো। দেখবে জীবনে অনেক সুখ আর শান্তি পাবে। ভাবছো- অরুণ মাজী গাঁজা টেনে বকবাস শুরু করলো? বেশ।
জীবনে তুমি অনেক অঙ্ক কষলে। পরিশ্রম করলে। ভদ্র সাজলে। অন্যকে ঠকিয়ে জিতলে। কিন্তু তাতে সুখ পেয়েছো কি? সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনি খাটলে। অথচ সুখ? হতচ্ছাড়া সুখ আড়াল থেকে তোমাকে ভেংচি কাটে।
অথচ তোমার পাড়ার ফোর টোয়েন্টি মার্কা ছেলেটা বহাল তবিয়তে, তোমার নাকের ডগায় দিনরাত হৈহুল্লোড় করছে। তার হয়তো অর্থের অভাব আছে। কিন্তু সে তোমার থেকে অনেক বেশি হাসে। অনেক বেশি জীবনকে উপভোগ করে। আর তুমি? একগাদা ডিগ্রি নিয়ে আর বড় চাকরি করেও, ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমুতে যাচ্ছো। আর দিনরাত বৌয়ের আদর মাখানো গালি খাচ্ছো। তো জয়ী কে? তুমি? অথবা তোমার পাড়ার ফোর টোয়েন্টি মার্কা ছোকরাটি?
পন্ডিত মানুষের চেয়ে বড় ভোঁদড় আমি দেখি নি। অথচ পন্ডিতদেরকে ভোঁদড় বললে- পন্ডিতদের পশ্চাৎদেশ চড়াম চড়াম করে ফাটে। ফাটে ফাটুক। তাতে অরুণ মাজীর উন্মাদনা একটুও কমবে না। অরুণ মাজী বিশ্বাস করে- ভোঁদড়কে তার আসল রূপ দেখিয়ে দেওয়া, এক ধরণের ঈশ্বর সেবা। ঈশ্বর সেবার সুযোগ থেকে অরুণ মাজী নিজেকে বঞ্চিত করবে না।
জীবনের রহস্য কি জানো? জীবনের যা কিছু নয়নাভিরাম সুন্দর বা মানুষের পক্ষে সত্যিকারের হিতকর; সে সব জিনিসগুলোকে ট্যাঁকের পয়সা খরচ করে তোমার কেনার দরকার হয় না। ভোরের বাতাস, গোধূলির অপরূপ রূপ, কলরবরত নদীর নৃত্য- এসব কিছুই মানুষকে গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী আনন্দ দেয়। কিন্তু সেই অপরূপকে উপভোগ করার জন্য গভীর নিষ্ঠা আর সংবেদনশীল হৃদয় থাকা দরকার।
পক্ষান্তরে, তুমি যদি গাড়ি কেনো- তাহলে এক সপ্তাহ নাচানাচি করবে। তারপর লোনের টাকা শোধ করতে জীবনভর তুমি যন্ত্রণা পাবে।গাড়ি কেনার জন্য তুমি দশ বছর হাড়ভাঙা খাটুনি খাটবে। লোক ঠকাবে। চুরি করবে। অথচ তিন ইঞ্চি সাইজের ফ্লাট থেকে বেরিয়ে, খোলা মাঠে গিয়ে গোধূলির সৌন্দর্য্য তুমি কখনো দেখবে না।
মানুষ কি তাহলে ভোঁদড়দের চেয়ে বেশি ভোঁদড় নয়? তোমার বাড়ির বাচ্চার ল্যাপটপ, এক্স বক্স ইত্যাদি ভিডিও গেমস আছে। তবু রাতদিন তার ছিঁচকাঁদুনি। অথচ বস্তির ছেলেটা সারাদিন ভাঙা সাইকেলের চাকা নিয়ে রাস্তার উপর দিনরাত হেসেকুঁদে বেড়াচ্ছে। তোমার বাড়ির বাচ্চার মুখে হাসি নেই। অথচ ময়লা গায়ের ময়লা জামাকাপড় পরা রাস্তার ছেলের মুখে এতো হাসি কেন? হৃদয়ে তার স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাস কেন?
এতো ডিগ্রি নিয়ে আর বড় চাকরি করে, সুখের এক গোছা ঘাসও কি ছিঁড়তে পারলে? পারলে না। তাহলে? বকবাস করতে শেখো হে মানুষ, প্রাণ ঢেলে বকবাস করতে শেখো।
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem