জীবন বড় মিথ্যুক-
তাই আমি
জীবনের কাছে আর
জীবনের গল্প শুনি না।
ছোট্টবেলায়
জীবন আমাকে বলেছিলো-
সে স্বপ্নের মতো সুন্দর।
সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো-
বাছা বড় হ।
তোকে আমি
রাজত্ব আর রাজকন্যা
এক সঙ্গে দেবো।
অথচ কৈশোরে আমি
বাটার মুগর মার্কা চপ্পল
তিন জায়গায় সেলাই করে পরেছি।
জামার ময়লা আমি-
গরমকালেও,
গলায় মাফলার পরে ঢেকেছি।
কলেজে পড়ার সময়
ঋতুকে ভালো লেগেছিলো আমার।
একদিন তাকে ব্যঞ্জনাময় কিছু বললে-
সে উত্তর করলো-
'তুই নাকি দীপের কাছ থেকে
ধার করে বাসে চড়েছিস? '
গালে চামড়ার জুতো পড়লে
কেবল গালে ব্যথা হয়।
কিন্তু গালে অপমানের জুতো পড়লে
দেহ মন আত্মা সবই রক্তাক্ত হয়।
ঋতু খুব সংক্ষেপে বুঝিয়ে দিয়েছিলো-
তার মতো মেয়েকে ভালোবাসতে হলে
একটু চকচকে হতে হয়
আর ট্যাঁকে কড়ি থাকতে হয়!
জীবন যে কত বড় মিথ্যুক-
এ কেবল তার ছিঁটেফোঁটা উদাহরণ!
এ রকম লক্ষ লক্ষ অপমান
আমার বুকের ভিতর গাঁথা!
কাগজের ঠোঙা বিক্রি করে
মেট্রিক পরীক্ষার
বিল চুকিয়েছিলাম আমি।
সেই পরীক্ষার পর
একদিন আমার মৃত্যুর সঙ্গে দেখা!
জ্বরে বিকারগ্রস্ত।
আমি স্বপ্নে শুনলাম, মৃত্যু বলছে-
'নাঃ তুই শালা দুধের বাচ্চা!
এখন নেবো না তোকে।
যতদিন না নিচ্ছি তোকে
ভালো করে বেঁচে নে বাছা।'
মৃত্যু যে এতো মহান
তা আগে আমি জানতাম না।
এরপরও
বেশ কয়েকটা যুদ্ধক্ষেত্রে,
মৃত্যুর সাথে আমার
হুঁকো টানতে টানতে কথা হয়েছিলো।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম-
কিগো,
আমার কি সময় হয় নি এখনো?
মৃত্যু আমার গাল টিপে
মিচকি হাসি হেসে বলেছিলো-
ধুসঃ তুই শালা এখনো দুধের বাচ্চা!
মৃত্যু আমাকে শিখিয়েছে
জন্ম আর মৃত্যুর মাঝে যে পথটা,
সেই পথটা নিজেও চলমান।
সেই পথে-
ফুল আছে, কাঁটা আছে
আলো আছে, আঁধার আছে।
সেই আলো-আঁধার, ফুল-কাঁটায় ঢাকা পথে
মানুষকে গৌরাঙ্গের মতো
দুহাত তুলে নাচতে হয়।
সত্যি কথা বলতে কি-
সেই পথে
যে-ই দুহাত তুলে
ধেই ধেই করে নাচতে পারে
সে-ই গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু হয়।
আর যে পারে না-
সে অকাল কুষ্মান্ড
নরকের কীট হয়।
তার আত্মা এতো দুর্গন্ধযুক্ত হয়
যে- মৃত্যু যখন তাকে নিতে আসে
সে নাকে রুমাল ঢেকে আসে!
মৃত্যু আমার প্রিয় বান্ধব।
সিঙ্গাপুর থেকে এক প্যাকেট
হাভানা চুরুট কিনেছি আমি।
পরের বার মৃত্যুর সঙ্গে দেখা হলে
তাকে আমি
হাভানা চুরুট খাওয়াবো!
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem