শুধু তোমাকে,
তোমাকে ভালোবাসতেই ভালোবাসি।
নইলে আর ভালোবেসে, লাভ কি বলো?
পৃথিবীর কত কেউ তো ভালোবাসে না
তাদের, দিন কি আর চলে না?
ভালো না বেসেই তো, কত বাউন্ডুলে
বগলে গামছা নিয়ে বন বন করে ঘুরছে
ভোঁ ভোঁ বাঁশি বাজিয়ে, রথের মেলায় ফূর্তি করছে
গাছের মগ ডালে চড়ে, পৃথিবীকে ভেংচি কাটছে-
তাবলে কি তারা সুখে নেই? বেশ আছে। খাসা আছে।
তারাও, নাকে সর্ষে তেল দিয়ে, নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে
ফড়িং-এর সাথে 'ইচিং বিচিং চিচিং ফাঁক' খেলছে
চমচমওয়ালা হেঁকে গেলে, গোটা গোটা চমচম গিলছে।
তারা বেশ আছে। খাসা আছে।
পদ্মাসনে রোদ পোয়াচ্ছে আর ভুজঙ্গাসনে কবিতা লিখেছে!
তবে ভালোবাসা কেন? ভালোবাসা কেন?
তাও আবার বেছে বেছে, তোমাকে ভালোবাসা কেন?
অথচ ভালোবাসতে চাইলে
বেছে বেছে তোমাকেই ভালোবাসতে চাই!
পৃথিবীর সওয়া দু কোটি রমণীর মধ্যে
কেবল তোমাকেই ভালোবাসতে চাই!
ফর্সা কালো দেখে দেখে, ঈষৎ শ্যামবর্ণা
সেই তোমাকেই ভালোবাসতে চাই।
উঁচুবুক নিচুবুক দেখেদেখে, হাল্কা উঁচুবুকের
কেবল তোমাকেই ভালোবাসতে চাই।
লাল ঠোঁট, গোলাপী ঠোঁট দেখে দেখে
চেরি ঠোঁটের- কেবল তোমাকেই ভালোবাসতে চাই!
কেন চাই? কি কারনে চাই?
কি কারনে কেবল তোমাকেই ভালোবাসতে চাই?
তোমার চেয়ে সুন্দরী তো অনেক আছে;
কিন্তু তাদের দেখে, চোখে লাগে না কেন?
তাদের দেখলে, বুকটা ধড়াস ধড়াস করে না কেন?
তারা হেঁটে গেলে, বুকে চিনচিনে ব্যথা হয় না কেন?
তারা গালে টোল ফেললে, হাতটা নিশপিশ করে না কেন?
অথচ দেখো- এসব কেবল তোমাকে দেখলেই হয়।
এমনকি তোমাকে না দেখে, শুধু ভাবলে পরেই হয়।
এমনকি তোমাকে না ভেবে, শুয়ে পড়লেও হয়!
কেন হয়? বলি- কেন হয়?
পৃথিবীর সওয়া দু কোটি রমণীর জন্য হয় না
অথচ তোমার জন্য হয়। কেন হয়?
একবার দু বার নয়, বারবার হয়? কেন হয়?
অথচ বাধা কি আমি দিই না?
দিই। আলবৎ দিই। হাজারবার দিই।
তোমার দিব্যি দিয়ে বলছি দিই।
তবুও, মন মানে না। কেন মানে না?
আমার মন, সে আমার কথাই শোনে না!
আমার খুলির মধ্যে, আমার খেয়েদেয়ে বড় হওয়া-
আমার পোষ্য মন, সে আমার কথাই শোনে না!
কেন শোনে না? জানো? তুমি কি জানো?
তুমি কত কিছু তো জানো! কিন্তু এর কারন কি জানো?
জানো না। আমি জানি- তুমি জানলেও বলবে না!
তুমি গাঁয়ের মেয়ে কিনা, তাই বলবে না!
হতো সেই সাদা সাদা, ছোট ছোট জামা পড়া মেমসাহেব মেয়ে
তারা সব বলে দিতো। খুলে সব বলে দিতো!
গৌরচন্দ্রিকা না করে, তারা এক্কেবারে মহাভারত শুনিয়ে দিতো!
অথচ দেখো- যে মেয়েটা কিছুই বলে না
আমি কেবল তার থেকেই শুনতে চাই!
কেন চাই? কি জন্য চাই?
টিয়াপাখি, ময়না পাখি- চাইলে তো আমি
সকলের থেকে শুনতে পারতাম!
কিন্তু বেছে বেছে, কেবল তোমারই কণ্ঠ শুনতে চাই
তোমারই নিক্কন শুনতে চাই, তোমারই কঙ্কনধ্বনি শুনতে চাই!
তোমারই ভেংচি কাটা, তাচ্ছিল্য দেখতে চাই!
বুক কি আমার ভাঙে না? ভাঙে। বারবার ভাঙে।
গ্রীষ্মে, চৌচির পৃথিবীর আর্তনাদের মতো ভাঙে।
নিশঃব্দেও ভাঙে। কেঁদে কেঁদেও ভাঙে।
কিন্তু কি করবো বলো-
ক্যাবলা বলে, কোনদিনই আমাকে ভালোবাসো না!
নাকটা আমার চাপা বলে, ফিরেও কখনো তাকাও না।
রঙটা আমার কালো বলে, একদিনও একটু হাসো না!
ক্যাবলা বলে কি পুরুষ নই?
বলো- ক্যাবলা বলে কি আমি পুরুষ নই?
আমারও তো মুখে কালো কালো গোঁফ!
একটু কচি কচি এই যা! আসছে অঘ্রাণ মাসে-
সেগুলোও বড় হবে! ইয়া ইয়া লম্বা হবে!
কিন্তু তখনও কি তুমি ভালোবাসবে? বাসবে না!
কখনো তুমি ভালোবাসবে না। একটুও তুমি ভালোবাসবে না।
বুকে ঘৃণা নিয়ে, ভুল করেও একটু ভালোবাসবে না।
তোমার এতো ভুল হয়, কেবল আমার বেলা হয় না।
একবারও হয় না। কক্ষনো হয় না।
ভুল করেও, ভুল হয় না।
জানি জানি- ক্যাবলাকে কেউ ভালোবাসে না!
হে ঈশ্বর, শোনো তুমি শোনো- আমি ক্যাবলা বলে
আমাকে কেউ ভালোবাসে না!
তোমার আদরের মালবিকা, সেও ভালোবাসে না।
ভুলে করে সে, অমলকে একবারও ভালোবাসে না।
তা বলে এতো অবহেলা? তোমার অবহেলা?
যাকে ভালোবাসি, সেই রমণীর অবহেলা?
যাকে ভেবে, শূন্য আকাশে রামধনু আঁকি
সেই তিলোত্তমা রমণীর অবহেলা?
কিছু নেই গো। জীবনে কিছু নেই।
রমণীর ভালোবাসা পায় নি যে যুবক
সেই যুবকের জীবনে কিছুই নেই!
হায় ঈশ্বর, ক্যাবলা অমলকে
কেউ ভালোবাসে না!
© অরুণ মাজী
Painting: Richard S Johnson
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem