ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়
মহাবিশ্বের সব কিছু ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়।
গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবী ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়
প্রেম স্বপ্ন স্মৃতি, তারাও ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়।
ক্ষয়ে যায় প্রেয়সী ওষ্ঠের
গোধূলি বর্ণ মিষ্টি মিষ্টি হাসি।
ক্ষয়ে যায় তার কাজল কালো চোখের
ঝিলিক ঝিলিক দৃষ্টি।
হাতে আমার
মালবিকা বুকের কত সুগন্ধ লেগে ছিলো!
চোখে আমার
তার স্বপ্ন চোখের কত কবিতা লেখা ছিলো!
বুকে আমার
তার তীক্ষ্ণ নখের কত আঁচড় আঁকা ছিলো!
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় গো, ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়।
স্বপ্ন সুগন্ধ স্পর্শ
তারাও কেমন কালের স্রোতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়।
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়, তবু
হারিয়ে তো যায় না!
মুছে মুছে যায়, তবু
বিলীন হয়ে তো যায় না!
সেদিন বিশ বছর পর
চূর্ণীর কাছে গেছি।
হঠাৎই শুনি
কে যেন খিলখিল করে হাসছে!
কে? কে ওখানে?
মালবিকা! তুমি?
এখানে? এতো বছর পর?
জানো? হাসিটা তোমার সেই একই রকম আছে।
জুঁই হাসনুহানা টগর রজনীগন্ধা মাখা
তোমার হাসিখানা
সেই একই রকম আছে।
একটু কাছে আসবে?
এসো, অন্তত একটু কাছে এসো।
জানো? বুকটা তোমার আগের মতোই উন্মাদ !
আগের মতোই সে বৈশাখীর ঝঞ্ঝা
টাইফুন টর্ণেডোর মহাপ্রলয়।
ছুঁতে দেবে? একটু ছুঁতে দেবে?
দাও না গো! কতদিন ছুঁই নি তোমাকে!
বিশ বছর
গোটা একটা যুগ মালবিকা!
কতদিন, কতদিন ছুঁই নি তোমাকে!
একবারও কি মনে পড়ে নি আমাকে?
একবারও?
জানো? আমার কিন্তু
আজও মনে পড়ে তোমাকে।
একলা পৃথিবীতে তখন
তুমি আমি আর নৈঃশব্দ।
সামনে গোধূলির নিঃশব্দ আহ্বান
মাথার উপর হাস্যরত জ্যোৎস্না
পদতলে চূর্ণীর কোমল স্নেহস্পর্শ।
সেদিন ছিলো পূর্ণিমা।
তোমার হাত, আমার কাঁধে;
আমার হাত, তোমার বুকে!
লজ্জিত আঁচল তোমার
অনেক আগেই খসে গেছে।
প্রলম্বিত প্রশ্বাস তোমার
অধৈর্য্য উন্মাদের মতো
আমার কাছে কি যেন কি চাইছে।
সব শেষে
বুকে অর্দ্ধতৃপ্তির হাহাকার নিয়ে
অভিযোগ করেছিলে তুমি-
"সন্ধ্যে কেন শেষ হয় অমল? "
চোখে আমার জল কেন?
কে জানে?
ঠান্ডা হাওয়া হবে হয় তো!
এ কি! কোথায় তুমি?
এই তো ছিলে তুমি বাহুর আবেশে!
কোথায়?
কোথায় তুমি হে স্বপ্নময়ী বালিকা?
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়
মহাবিশ্বের সব কিছু ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়।
গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবী ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়
প্রেম স্বপ্ন স্মৃতি, তারাও ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়।
কিন্তু মালবিকা?
সে কেন এ অন্তর মাঝে
আজও, রয়ে রয়ে যায়?
© অরুণ মাজী
Painting: Amit Bhar
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem