●
এখনও নীরবতার অধর্ষিত নববধু তুমি,
পালিত কন্যা নৈঃশব্দ্য ও ধীর মহাকালের,
আরণ্যক ইতিহাসবিদ, যে বিবৃত করতে পারে না
এ পুষ্পময় কাহিনী আমাদের ছন্দের অধিক মিষ্টতায়:
তোমার আকৃতিতে কী পাতার পাড় বুনেছে কিংবদন্তীর আত্মাগণ
দেবদেবীর না মানুষের, নাকি উভয়ের,
অলিম্পাস উপত্যকায় নাকি আরও শান্ত পল্লীস্বর্গে?
কারা তারা: মানুষ না দেবতা? কুমারিদের কোন সঙ্গম অনীহা?
কোন্ উন্মত্ত সাধনা? পলায়নপরতার কোন্ সংগ্রাম?
কোন সব বাঁশি ও খঞ্জনি? কোন বুনো কামোচ্ছ্বাস?
শোনা সুরগুলো মধুর, কিন্তু অশ্রুতগুলো
মধুরতর, অতএব, তোমার কোমল বাঁশিগুলো, বাজাও;
শ্রবণেন্দ্রীয়ময় কানে নয়, বরং অধিকতর আদুরে ভঙ্গিতে,
বাজাও অন্তরাত্মার কানে শব্দহীন নিরীহ সুর।
বৃক্ষাদিতলের, মনোহর যৌবন, ছেড়ে যেতে পারবে না
এই গান, এমনকি পর্ণমোচী হতে পারবে না ওই গাছগুলোও;
সাহসী প্রেমিক, কখনও নয়, কখনও চুম্বন করতে পারবে না তুমি,
যদিও বিজয় গন্তব্য ছুঁয়েছে প্রায়, তবু দুঃখ কোরো না,
বিবর্ণ হবে না কাঙ্ক্ষিতা, যদিও তার সম্মতির আশীর্বাদ পাওনি,
চিরকাল তাকেই ভালোবাসবে, আর সে হয়ে উঠবে মোহিনী!
আহ, সুখি, আনন্দিত ডালপালা! ওরা ছায়া দিতে পারবে না
তোমার পাতাগুলোকে, এমনকি বসন্তকেও জানাতে পারবে না বিদায়;
আর সুখি বংশীবাদক, অক্লান্ত,
চিরকাল বাজাচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন গান;
আরও খুশি প্রেম! অধিক আনন্দিত, দীলখুশা ভালোবাসা!
চিরন্তন উষ্ণ, আর এখনও উপভোগ করবে আরও,
হাঁপাচ্ছে অনন্তকাল, আর চিরকেলে সজীব;
বহু উপর থেকে শ্বাস ফেলছে মানবীয় আবেগ,
ওইসব পাতা ভীষণ দুঃখভারাক্রান্ত এক হৃদয় আর বীতস্পৃহ,
দাহ্যমান এক কপাল, আর তৃষ্ণাকাতর জিহ্বা।
কারা ওরা এই বলিদানে আসছে?
কোন টাটকা যূপকাষ্ঠে, রহস্যমণ্ডিত হে পুরোহিত,
তোমার দিকে যেসব গো-বকনা নেমে আসছে আসমানগুলো থেকে
আর তাদের সারাদেহের রেশমি লোম পুষ্পমাল্যে ছাওয়া?
নদীবর্তী বা সমুদ্রতীরের কোন ছোট্ট শহর
অথবা শান্তিপূর্ণ দূর্গে ঘেরা কোন পাহাড়-বসতি,
শূন্য হচ্ছে গোশাবকদের হারিয়ে, এই পবিত্র প্রভাতে?
এবং, ক্ষুদে শহর, চিরকালীনেরও অধিককাল তোমার সড়কগুলো
নীরব হয়ে থাকবে; আর একথা বলার জন্য একটা আত্মাও থাকবে না
কেন জনশূন্য তুমি, কখনও কেউ ফিরতে পারবে কিনা।
হে চিলেকোঠা-অবয়ব, মোহন মনোভাব! জটিল নকশায়
মদমত্ত সব মার্বেল পুরুষ আর সদ্যযুবতি,
বন শাখাদি আর পদদলিত আগাছা;
তুমি, নীরব ভঙ্গিমা, উস্কানি দিচ্ছো আমাদের ভাবনায়,
যেমন তাড়না দেয় অনন্তকাল: কামুক রাখালিয়া!
যখন পড়ন্ত বয়স অপচয় করবে এই প্রজন্ম,
থেকে যাবে তোমার মধ্যে, অন্য এক সন্তাপ জুড়ে, যা
আমাদের থেকে পৃথক, মানুষের বন্ধু তুমি, তাদের বলছো:
‘‘সৌন্দর্য সত্য, সত্য সৌন্দর্য, _ এটাই চূড়ান্ত কথা
তোমরা জানবে পৃথিবী, এবং তোমাদের সবার জানা দরকার।''
●
* Original: Ode On A Grecian Urn- Poem by John Keats
** Bengalization: Rahman Henry