মালবিকার বিষ ও নলেন গুড়ের বাতাসা (On Suffering) Poem by Arun Maji

মালবিকার বিষ ও নলেন গুড়ের বাতাসা (On Suffering)

Rating: 5.0

পায়ের নীচে দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমা। আর মাথার উপর গোধূলি রঙে রাঙা দিগন্ত।
এখন তোমার ইচ্ছে-
তুমি গোধূলি রঙে রাঙা সুন্দর দিগন্ত দেখে, আহাঃ আহাঃ করে আনন্দ করবে!
অথবা পায়ের নীচে দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমা দেখে, হাউ মাউ করে কাঁদবে!

জীবনে দুঃখ আছে, আনন্দও আছে। জীবনে যন্ত্রণা আছে, নিরাময়ের কোমল স্পর্শও আছে। জীবনে অমাবস্যার ত্রাস আছে, পূর্ণিমা রাতের সাহস ভরা হাসিও আছে।

সৃষ্টির সব কিছু জোড়ায় জোড়ায়। জোয়ার ভাঁটা। রাত দিন। পাপ পুণ্য। প্রেম ঘৃণা। কেবল "একাকী সুখ" বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব কখনো সম্ভব নয়। কেবল "একাকী জোয়ার" বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব কখনো সম্ভব নয়।

তোমার জীবনেও, "একাকী সুখ" বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব সম্ভব নয়। জীবনে তোমার ফুল থাকবে, কাঁটাও থাকবে। মালবিকার বুকের নরম গরম স্পর্শ থাকবে, আর তার দাঁতের জ্বালা ধরা কামড়ও থাকবে। মালবিকার উষ্ণ স্পর্শ চাইবে, দাঁতের বিষ চাইবে না? একি মামদোবাজি নাকি হে অমল? তুমি যদি নাও চাও, দাঁতের বিষে তুমি জ্বলবেই, সেই সঙ্গে মুড়ো ঝাঁটার ধোলাইও পিঠে পড়বে।

তোমার জীবনেও তাই ঘটে। দুঃখকে আলিঙ্গন করলে, দুঃখ তার তীব্রতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু দুঃখকে নিয়ে তুমি যদি অভিযোগ করো, "দুঃখ" তখন বিছুটি পাতা, ঝামা, আর লাল লঙ্কা নিয়ে তোমার বুকে বাসা বাঁধবে। দুঃখ তখন, তোমার চামড়াটাকে ঝামা দিয়ে ঘষবে, তারপর তাতে বিছুটি পাতা আর লঙ্কা বাটা ঘষে দেবে।

হারামজাদা অমল কি করে জানো? হতচ্ছাড়া, পকেটে খেজুর গুড়ের বাতাসা নিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়। মালবিকা দাঁত দিয়ে কাটলে, বিষগুলো সে বাতাসা মেখে খায়। আর ক্যাবলার মতো হেসে বলে "জানো মালবিকা, তোমার বিষও কিন্তু বেশ খাসা অমৃত! "

এই হলো জীবনে দীর্ঘ আনন্দ পাওয়ার চাবিকাঠি। জীবনে দুঃখ তোমার আসবেই। কিন্তু দুঃখকে নলেন গুড়ের সন্দেশ মেখে খাও তুমি। দেখবে- দুঃখও তখন বেশ মিঠে মিঠে লাগবে।

আমার পাড়ার বৃন্দাবনীর কথা মনে পড়ে? বিন্দী বুড়ী কি করে? সারাদিনের দুঃখ যন্ত্রণা শেষে, সন্ধ্যের সময় দালানে বসে, ছেলে বুড়োর সাথে বিন্দী বুড়ী গায়-
আহাঃ কি আনন্দ জীবনে।
পান খেয়ে মোর দাঁত গেলো
তবু হাসি ধরে না বদনে।

দুঃখের দিনে অরুণ মাজীর মতো গোমড়া মুখে দুঃখু দুঃখু ভাব করলে, দুঃখ কি তোমাকে আগে ছেড়ে যাবে? দুঃখ দুঃখ বলে পাড়া জুড়ে ঢ্যাঁড়া পেটালে, দুঃখ কি তোমার কমে যাবে? কক্ষনো না। হারামজাদা দুঃখ তোমার বুকে এলে, দুঃখের চেয়ে তোমাকে উঁচু গলায় গাইতে হবে-
আহাঃ কি আনন্দ জীবনে।
পান খেয়ে মোর দাঁত গেলো
তবু হাসি ধরে না বদনে।

জীবনে যে গলা ছেড়ে, কাঁছা দুলিয়ে, দু হাত তুলে গাইতে পারবে, সেই কেবল সদানন্দ হবে। সেই কেবল শ্রী চৈতন্য হবে। সেই কেবল গৌতম বুদ্ধ হবে। সেই কেবল দুঃখহীন হবে। ধন সম্পত্তি গাড়ি বাড়ি দিয়ে, কখনো তুমি দুঃখহীন হতে পারবে না। খ্যাতি প্রতিপত্তি দিয়ে কখনো তুমি দুঃখহীন হতে পারবে না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধন সম্পত্তি বানানোর অক্লান্ত চেষ্টা, তোমাকে আরও বেশি যন্ত্রণা দেবে।

দুঃখ হীন হওয়ার জন্য, তোমার কেবল ছোট্ট কতকগুলো জিনিস দরকার-
একটা তালপাতার বাঁশি,
আর বিন্দী বুড়ীর মতো ফোকলা দাঁতের হাসি।
(আর পারলে, হারামজাদা অমলের মতো নলেন গুড়ের বাতাসা।)
ব্যাস। তাতেই তুমি দুঃখহীন বুদ্ধ!


© অরুণ মাজী
Paintings: Christiane Vleugels

মালবিকার বিষ ও নলেন গুড়ের বাতাসা (On Suffering)
Tuesday, April 24, 2018
Topic(s) of this poem: bangla,happiness,pain,poem,suffering
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success