পদ্মাবতী, পদ্মকাঁটা ও দুষ্টু এঁড়ে গরু (Padmavati) Poem by Arun Maji

পদ্মাবতী, পদ্মকাঁটা ও দুষ্টু এঁড়ে গরু (Padmavati)

Rating: 2.8

(এ এক উন্মাদের- মাথার উপর দাঁড়িয়ে, পা দুটো শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে, ক্যাবলা চোখে পৃথিবীটাকে ফ্যালফ্যাল করে দেখা)
- - -
পিঁপড়ের যেমন সন্মান প্রাপ্য, ছুঁচোরও তেমন সন্মান প্রাপ্য। ইঁদুরবিচির যেমন সন্মান প্রাপ্য, তেঁতুল বিচিরও তেমন সন্মান প্রাপ্য।

ওহে নগেন মাস্টার,
তেঁতুলবিচি বলে
সে কি আর বিচি নয়?
কেবল মনুষ্য বিচিই বিচি?

যাহা বিচির মতো দেখিতে, তাহাই বিচি। কলা বিচি, ঝিঙে বিচি, চিচিঙা বিচি, ছারপোকা বিচি, ষণ্ডবিচি, অতঃপর সব বিচির শিরোমণি- অমূল্য রত্ন সেই মনুষ্য বিচি! মনুষ্য যেমন- মনুষ্য বিচিকে শ্রেষ্ঠ দেখে, ইঁদুরও তেমন- ইঁদুর বিচিকে শ্রেষ্ঠ দেখে। সকলেই আপন আপন বিচিকে, জগৎ শ্রেষ্ঠ দেখবে।

কেবল এই বিচি তত্বের দ্বারাই- মনুষ্য জাতির "নিরপেক্ষ" কথাটাকে, অভিধান থেকে আমি মুছে দিতে পারি। যেমন আমি পারি ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের "ধর্ম নিরপেক্ষ" কথাটাকে অভিধান থেকে মুছে দিতে। বিদগ্ধ সাইকোলজিস্টরা ভালোই জানেন, নিরপেক্ষ বলে- কোন কিছু হয় না। সব মানুষই, আপন আপন বিচি বেশি ভালোবাসবে, এবং সকলেই- আপন আপন বিচিতে তেল দিয়ে, তার উপযুক্ত পরির্চযা করবে। কেবল বিচি-হীন মানুষই আপন বিচির গুনগানকে ঘৃণা করবে। হায় ঈশ্বর! কেন যে এরা, আপন বিচির দুর্লভ সুখ থেকে সারাজীবন বঞ্চিত থাকিল!

এখন প্রশ্ন- ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা কি তাহলে বিচি-হীন মানুষ? এ প্রশ্নের উত্তর- আমি দার্শনিক আর বিতর্কবিদদের হাতে ছেড়ে দিলাম।

তোমরা ভাববে- অরুণ মাজী আবার তার সেই অশ্লীলতা শুরু করলো! অরুণ মাজীর এই অশ্লীল নগ্ন সত্যের জন্যই, বাংলার লেখক আর প্রকাশনা জগৎ তাকে হিংসে করে, ঘৃণাকরে। অরুণ মাজীকে, বাংলার লেখক আর প্রকাশনা জগৎ, তার লেখা ছাপতে দেয় না! শালা পাপী অরুণ মাজীটা মরে না কেন?

তাই নাকি হে? তোমরা যখন কাঁঠাল বিচি ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে- ভেজে খাও, সেদ্ধ করে খাও; তখন তোমরা, বিচির প্রতি তোমাদের ভালোবাসা প্রদর্শন করো না? তোমাদের বিচি ভাজা ভালো লাগে। আমার বিচি তত্ত্ব ভালো লাগে। তোমাদের সঙ্গে আমার, তফাৎ কেবল এতটুকুই।

এবার প্রশ্ন- জগতে সুন্দর সুন্দর এতো তত্ত্ব থাকতে, কেন আমি আজ বিচি তত্ত্বের জয়ধ্বনি গাইছি? কারন- এই বিচিতত্ত্ব দিয়ে আমি, "পদ্মাবতী" বিতর্কে আলোকপাত করবো।

আগে কি বলেছি আমি? সকলেরই আপন বিচির প্রতি ভালোবাসা থাকে, দুর্বলতা থাকে, আবেগও থাকে। বাঙালি হিসেবে আমার বাঙালি আবেগ আছে। ভারতীয় হিসেবে আমার ভারতীয় আবেগ আছে। ঠিক তেমনি- রাজপুতদেরও রাজপুত আবেগ আছে।

আবেগ যুক্তি সম্মত হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। আবেগকে যুক্তি সম্মত হতে হবে- এমন কোন বাধ্য বাধকতা নেই। সেই জন্যই আবেগকে আবেগ বলে, আবগেকে সে জন্য কেউ বিজ্ঞান বলে না।

আমাদের মতো যারা দর্শন আর সাইকোলজি নিয়ে পড়াশুনা করেছে, তারা জানে- মনুষ্য জাতি ভীষণ আবেগ প্রবণ জাতি। আইনস্টাইনের মতো প্রবল যুক্তিবাদী মানুষও, আবেগের কারনে- রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আইসক্রিম কিনে খায়। বারাক ওবামাও, কেবল আবেগের কারনে, তার মেয়েদেরকে ম্যাকডোনাল্ডে নিয়ে গিয়ে, অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার কিনে দিয়ে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করেন। প্রবল যুক্তিবাদী মানুষও, তার দৈনন্দিন জীবনের ৯০% ডিসিশান আবেগের বশবর্তী হয়ে নেন।

যে ইতিহাস আর আবেগ, রাজপুরা বিগত ছশো বছর ধরে হৃদয়ে পোষণ করে আসছেন; তার প্রতি তাদের ভাবাবেগ (ভীষণ অযৌক্তিক হলেও) যে গাঢ় হবে- তাতে কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রশ্ন- কারও ভাবাবেগে আঘাত করা কি অন্যায়? অবশ্যই। ভারতীয় সংবিধানও তা স্বীকার করে। স্বীকার করে বলেই, ভারতীয় সংবিধান বিভিন্ন ধর্মের ভাবাবেগকে শ্রদ্ধা করার নিদান দেয়।

কাজেই "পদ্মাবতী" নিয়ে বিতর্কে, সঠিক প্রশ্ন হলো- এই বিতর্কে কি রাজপুতদের ভাবাবেগ আক্রান্ত? রাজপুতদের হৈহল্লা প্রমাণ করে যে, হ্যাঁ- এই বিতর্কে রাজপুতদের ভাবাবেগ আক্রান্ত। আক্রান্ত যদি নাই বা হবে, তবে এরা এতো মানুষের এতো সমর্থন পায় কি করে? তাদের ভাবাবেগ কি যুক্তিসঙ্গত? আমি পদ্মাবতী মুভিটা এখনো দেখিনি, তাই আমি তা বলতে পারবো না।

ভাবাবেগ নিয়ে এই উত্তেজনা পৃথিবীতে এই প্রথম নয়। তসলিমা নাসরিন কেন বাংলাদেশ ছাড়া? সলমন রুশদি কেন আপন দেশ ছাড়া? "জুলফিকার" মুভিতে কেন কাঁচি চালাতে হয়? তার সবেরই কারন কিন্তু- মানুষের এই ভাবাবেগ। ভাবাবেগ যুক্তি সঙ্গত না হলেও, ভাবাবেগ যে মানুষকে আঘাত করে, তা ১০০% সত্য।

বাস্তবে বাস করে, বাস্তবকে গ্রহণ করা- একজন মানুষের বিচক্ষণতার পরিচয়। হাভার্ড স্টাইনফোর্ড এডুকেটেড "লিবারেল" মানুষরা যদি এই বাস্তবকে গ্রহণ করতে না পারে- তখন প্রশ্ন জাগে, "এই "লিবারেল" মানুষরা কি সত্যিকারের "লিবারেল"?

কিন্তু একজন লেখক, মুভি ডিরেক্টার- তাদেরও তো সৃষ্টি করার স্বাধীনতা আছে। তাদেরও তো নিজস্ব ভাবাবেগ আছে। রাজপুতদের ভাবাবেগের কারনে- সেই সব লেখক বা মুভি ডিরেক্টারদের স্বাধীনতা বা ভাবাবেগ খর্ব হবে কেন? এটাও তো ভারতীয় সংবিধান বরদাস্ত করে না।

এই দুই বিপরীত ভাবাবেগের সংঘাত তাহলে মিটবে কি করে? আমি বিশ্বাস করি, মানুষ চাইলে সব সমস্যার সমাধান এক নিমেষেই সম্ভব হয়। কিন্তু মানুষ যদি তার সমস্যার মধ্যে, "রাজনীতিক" নামে কৃমিমস্তিকের রক্ত চুঁষা উকুনকে আমদানি করে, তাহলে সেই সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। যে সমস্যা সঞ্জয় বনশালী আর রাজপুত নেতাদের মধ্যে, এক ঘন্টার আলোচনায় মিতে যেত, সেই সমস্যা রাজনীতিকদের কারনে যুগযুগ বেঁচে থাকবে।

তবে লেখক এবং শিল্পীদেরকে আমার ছোট্ট একটা প্রশ্ন- তারা কেন কেবল, পদ্মাবতীর মতো নারী চরিত্র নিয়ে তাদের কাহিনী নির্মাণ করে? পদ্মাবতী উপাখ্যানের অপর কেন্দ্রীয় চরিত্র, মহারাজা রতন সেনের চরিত্রও তো কম আকর্ষক নয়! সে চরিত্রেও তো অনেক ত্যাগ আছে, রোমান্স আছে, বীরত্ব আছে।তবে কি ধরে নিতে হয়, বিতর্ক সৃষ্টি করেই ছবি নির্মাতারা তাদের ব্যবসায়িক মুনাফা গড়তে চায়? শিল্প সৃষ্টি কি তবে, এ ছবি নির্মানের মূল লক্ষ্য নয়? তাহলে ছবির নাম "মহারাজা রতন সেন" নাম না হয়ে, "পদ্মাবতী" হলো কেন? এও কি তাহলে- শিল্পীদের ঘোমটার নীচে খ্যামটা নাচ? ব্যবসায়িক সাফল্য কি, মানুষের ভাবাবেগের প্রতি শ্রদ্ধার চেয়ে বেশি কাম্য?

আমি মানুষকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু রাজনীতিকদেরকে করি না। আমার কাছে দু-পেয়ে জীব দু প্রকার- মানুষ আর রাজনীতিক। যারা মানুষের চামড়া পরে কৃমিমস্তিকের রক্ত চুঁষা উকুন হয়ে যায়, তাদেরকে রাজনীতিক বলে। রাজনীতিকরা মানুষ নয়। (মনে রেখো- সুভাষ বসু, বিধান রায় রাজনীতিক নন। এরা দেশ নেতা)। এরা হিংস্র, রক্ত চুঁষা উকুন। এরা দেশ আর দেশবাসীকে রক্তশূন্য করে রগড়ে রগড়ে মারে।

একদল কোন নির্দিষ্ট ধর্মকে সুড়সুড়ি দেয়; অন্যদল ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে, অন্যধর্মের মানুষকে সুড়সুড়ি দেয়। দু দলই তো সমান হারামি। পশ্চিমবঙ্গে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে এসেছে কে? ছদ্ম ধর্ম নিরপেক্ষবাদী শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জী। আগামী কয়েকবছর পর, বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় বসাবে কে? ছদ্ম ধর্ম নিরপেক্ষবাদী শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জী।

ভারতবর্ষে বিজেপির অপ্রতিরোধ্য জয়যাত্রার পথ সুগম করে দিয়েছে কে? ছদ্ম ধর্ম নিরপেক্ষবাদী কংগ্রেস আর বামফ্রন্ট। দেশে ধর্ম ভিত্তিক মেরুকরণ ঘটিয়েছে কে? কংগ্রেস, বামফ্রন্ট, মমতা ব্যানার্জী, মুলায়ম যাদব ইত্যাদি। এরা বিজেপির জন্য, সুন্দর করে লাল কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে। "পদ্মাবতী"র মতো ইস্যু নিয়ে, মমতা ব্যানার্জীর মতো "সস্তার" রাজনীতিকরা যত বেশি হল্লা করবে, দেশে হিন্দু ভাবাবেগ তত বেশি জাগ্রত হবে?

প্রিয় মমতা দি, আপনি একবার শ্রী নরেন্দ্র মোদী, শ্রী মোহন ভাগবত, শ্রী প্রবীণ তোগাড়িয়ার চওড়া হাসিটা স্বচক্ষে দেখে আসুন।

আমার ধারণা- আগামী ত্রিশ বছর ধরে বিজেপির অপ্রতিরোধ্য জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে। কংগ্রেস এক্কেবারে মুছে যাবে। বিজেপির বিরোধী শক্তি বলতে, কেবল মাত্র আঞ্চলিক দল বেঁচে থাকবে। এই গন্ডমূর্খের কথা, সেদিন তোমরা মিলিয়ে নিও।

তোমরা যারা "লিবারেল", তাদেরকে কানে কানে বলি- তোমরা কেবল সোশ্যাল নেটওয়ার্কে গলা ফাটাবে, আর বিজেপির জয়যাত্রায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে, বাথরুমে ঘন ঘন বিঁড়ি ফুঁকবে।

© অরুণ মাজী
Painting: Hemen Majumdar

পদ্মাবতী, পদ্মকাঁটা ও দুষ্টু এঁড়ে গরু (Padmavati)
Tuesday, November 28, 2017
Topic(s) of this poem: bangla,culture,freedom of speech,history
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success