তুমিও আকাশ হতে পারো, হিমালয় হতে পারো। তুমি জিজ্ঞেস করবে- তাই যদি সত্যি, তাহলে সকলে রবি ঠাকুর, সুভাষ বসু বা বিবেকানন্দ হয় না কেন?
তোমার অনেক টাকা। কিন্তু সেগুলো তুমি ব্যাঙ্কে ফেলে রাখলে। তাহলে- সেই টাকা তোমার কোন কাজে লাগলো? কিন্তু তুমি যদি সেই টাকা দিয়ে হাভার্ডে পড়াশুনা করো, বা সেই টাকা দিয়ে বাচ্চাদের জন্য একটা স্কুল বানিয়ে দাও; তাহলে সেই টাকা তোমাকে, অনেকটা উঁচুতে পৌঁছে দেবে।
কোন কিছু থাকলেই, তা ফলপ্রসূ হয়ে যায় না। সেই জিনিস- ফলপ্রসূ তখনই হয়, যখন তুমি সেই জিনিসটাকে, কোন গঠনমূলক কাজে লাগাবে। টাকা এমনিতে মূল্যহীন একটা কাগজ। কিন্তু তুমি সেই কাগজ দিয়ে যদি কোন গঠনমূলক কাজ করো, তখন সেই টাকা হয়ে যায় অনেক মূল্যবান।
তোমার মধ্যে আকাশের মতো সম্ভাবনা, কিন্তু তুমি সেই সম্ভাবনা কোন কাজে লাগালে না। তাহলে সেই সম্ভাবনার কোন মূল্য আছে কি?
এখন প্রশ্ন- তোমার অন্তর্নিহিত বিশাল সম্ভাবনাকে কি করে কাজে লাগাবে তুমি?
তোমার অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে, আগে জানতে হবে- তোমার মধ্যে কি সম্ভাবনা আছে? তা তুমি জানবে কি করে? তার জন্য তোমাকে শান্ত, স্থির আর নিরপেক্ষ ভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে-
১. কোন কাজটা করলে, তুমি সব চেয়ে বেশি আনন্দ পাও?
২. কোন কাজটাতে তোমার কোন ট্রেনিং নেই, অথচ তুমি নিজে নিজেই দারুন সুন্দর করো?
৩. কোন কাজটা করতে করতে, তুমি খাওয়া দাওয়া ঘুমানো ইত্যাদি ভুলে যাও?
৪. কোন কাজটা করলে তোমার এতো খুশী হয় যে,তুমি স্বত: স্ফূর্ত ভাবে আনন্দে গান গাইতে থাকো?
ধরো, তুমি ভীষণ সুন্দর মাটির পুতুল গড়তে পারো। তুমি পুতুল বানানোর সুযোগ পেলে খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি ভুলে যাও। তাহলে তোমার অন্তর্নিহিত শক্তি হলো মাটির পুতুল গড়া। ঈশ্বর তোমাকে গড়েছেন, কেবল মাটির পুতুল গড়তে।
এখন ধরো, তুমি ভাবলে- মাটির পুতুল তো কুমোরদের কাজ! এই কাজে করে কে আর কবে বড় লোক হয়েছে? তুমি বরং দেখো- MBA পাস করে লোকজন বড় বড় চাকরী করছে, আর মোটা মোটা মাইনে পাচ্ছে। তো তুমিও তাই MBA পাস করে চাকরী করতে শুরু করলে।
কি হবে তখন? তুমি যেহেতু কেবল রোজগার করার জন্যই MBA পাস করেছো, আর চাকরী করছো; তুমি খুব শীঘ্রই তোমার কর্মজীবনে হাঁপিয়ে উঠবে। ঘুম থেকে উঠে, অফিসে যেতে ইচ্ছে করবে না তোমার। জীবনে তুমি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়বে। তোমার কাছে কর্ম এবং জীবন দুটোই- দুঃসহ যন্ত্রণা হয়ে উঠবে। কর্ম জীবনেও তুমি, ভালো কিছু করতে পারবে না।
তুমি যে পেশা পছন্দ করেছো, তা তুমি লোভের কারনে পছন্দ করেছো। সে পেশা তুমি ভালোবেসে পছন্দ করো নি। তোমার লোভ- তোমার আত্মার উপর জোর করে একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে। ফলে- তোমার আত্মা, সারাজীবন দগ্ধে দগ্ধে মরবে। এর ফলে সারা জীবন তুমি যন্ত্রণা পাবে।
জীবনে যা কিছু করবে, তা ভালোবেসে করো। তাহলে জীবনে তুমি সুখী হবে, সমৃদ্ধ হবে। যেহেতু তুমি সেই কাজটা ভালোবেসে করো, সেহেতুতুমি সেই কাজটা দারুন সুন্দর করে করো। ফলে সেই কাজের মধ্য দিয়ে তুমি অনেক সন্মান পাবে। মানুষ যখন সন্মানিত বোধ করে- তখন সে আরোও আরও বেশি ভালো কাজ করতে চায়, আরও বেশী বাঁচতে চায়। সে আরও বেশী নিজেকে আর অন্যকে ভালোবাসতে চায়। সে তখন নিজেকে সুন্দর দেখে, পৃথিবীকেও সুন্দর দেখে। সে নিজের জীবনে আলো আনে, আর অন্যের জীবনও আলোকিত করে।এইরূপ যার জীবন- সে কখনো অবসাদগ্রস্ত হবে না। সে সুখী, সমৃদ্ধ আর মহান হবে।
তুমি যদি বাবা বা মা হও, তাহলে ছেলে মেয়েদের প্রতি নজর রাখো। পর্য্যবেক্ষণ করো- কোন কাজটা তারা স্বত: স্ফূর্ত ভাবে আনন্দের সাথে করে? তাদেরকে সেই কাজে আরও পারদর্শী হতে সাহায্য করো। ধরো- তোমার ছেলে খেলনা গাড়িগুলোকে কেবল খুলছে আর নতুন করে গড়ছে। তাহলে তাকে আরও জটিল ইঞ্জিনের কোন কিছু দাও। তাকে, সেটাও খুলতে আর গড়তে সাহায্য করো। ভবিষ্যতে সে হয়তো বড় কোন ইঞ্জিনিয়ার হবে।
ধরো তার ভালো লাগে ইঞ্জিনিয়ারিং, কিন্তু তাকে তুমি গুঁতিয়ে গুঁতিয়ে ডাক্তারি পড়ালে। তাহলে তার কবর তুমি, আগে থেকেই খুঁড়ে দিলে। বাচ্চাদেরকে শৈশব আর কৈশোরে, অনেক প্রকার জিনিস করতে দাও। আর নজর রাখো- সে সবকিছুর মধ্যে, কোনটা সে স্বত: স্ফূর্ত ভাবে খুব সুন্দর করে করছে। সে যদি তার নেশাকে, পেশা হিসাবে গ্রহণ করে; তাহলে অবশ্যই সে সুখী সমৃদ্ধ আর মহান হবে।
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem