(কলকাতার সাম্প্রতিক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা অবলম্বনে এ লেখা)
তিন্নি
জন্মেই খুব ঘাবড়ে গেছিস
তাই না?
ভাবছিস-
মেয়ে হয়ে কেন জন্ম নিলি?
ভাবছিস-
এতো ভয় মেয়েদের!
এতো যন্ত্রণা মেয়েদের!
ঘাবড়ে যাস না মা আমার
ঘাবড়ে যাস না।
ভয় হয়তো আছে
তবে তা কেটে যাবে।
আঁধার হয়তো আছে
তবে তা ঘুঁচে যাবে।
এই পৃথিবী সুন্দর হবে
কেবল একটা শর্তে-
তুই যদি এ পৃথিবীকে,
কেবল "পৃথিবীর চোখে" দেখতে শিখিস।
তুই ভয় পাচ্ছিস বলেই
এ পৃথিবী ভয়ার্ত নয়।
তুই বাধা পাবি বলেই
এ পৃথিবী জরাগ্রস্ত নয়।
তুই ধর্ষিত হয়েছিস বলেই
এ পৃথিবী ধর্ষক নয়।
এ পৃথিবীতে-
ঘৃণা যেমন আছে,
ভালোবাসাও তেমনি আছে।
হিংসা যেমন আছে,
প্রশান্তিও তেমনি আছে।
তোর আপন অভিজ্ঞতা
এ পৃথিবীর সংজ্ঞা নয়।
তোর আপন শিক্ষা
এ পৃথিবীর জ্ঞানের পরিচয় নয়।
পৃথিবী কেবল পৃথিবীর মতো তিন্নি,
পৃথিবী কেবল পৃথিবীর মতো।
এ পৃথিবী অরুণ মাজীর মতো নয়
এ পৃথিবী তিন্নির মতো নয়।
আমরা অনেকে বড় অলস তিন্নি।
এক নারী দোষ করলে
নারীজাতিকে আমরা দোষী বলে ডাকি।
এক পুরুষ ধর্ষণ করলে
পুরুষজাতিকে আমরা ধর্ষক বলে ডাকি।
আমরা বড় অলস আর স্বার্থপর।
ভালোকে আমরা
ভালো বলতে তো পারিই না;
বরং সন্তানের কারনে আমরা
তার বাবা মা ঠাকুরদা, সবাইকে সাজা দিয়ে ফেলি।
কেন? কারন-
তা করলে
আমাদের অনেক সুবিধা হয়।
আমরা তখন ঘোলা জলে মাছ ধরতে পারি।
ভন্ড এক সাধু দোষ করলে
আমরা
সমগ্র ধর্ম আর ঈশ্বরকে দোষারোপ করি।
এক নেতা দোষ করলে
আমরা
সমগ্র সরকার আর দেশকে গালি করি।
মানুষ যদি
সারাজীবন কেবল
তার পুড়তেথাকা ঘর সামলাবে;
তবে সে উঁচু চিন্তা করবে কখন?
তোর যদি সদা অপমানের চিন্তা
তবে তুই
উঁচু চিন্তা করবি কখন?
তোর যদি সদা আপন পিঠ বাঁচানোর চিন্তা
তবে তুই
সাগর নদী মহাকাশ নিয়ে ভাববি কখন?
উৎসকে ভালোবাসবি
শ্রদ্ধা করবি;
কিন্তু এই মাটি আকাশ পৃথিবীকেও
আপন সহোদর ভাববি।
নারী তুই,
কিন্তু পুরুষ তোর সহোদর।
হিংসা তাদের করবি না।
হিন্দু তুই
কিন্তু মানুষ তোর সহোদর
ঘৃণা তাদের করবি না।
ভারতীয় তুই
কিন্তু সমগ্র পৃথিবী তোর ঘর
অধিকার তুই ছাড়বি না।
নারী কেবল তুই জন্মে,
কিন্তু তোর পরিচয় হোক
তোর আপন কর্মে।
নারী কেবল তুই দেহে,
কিন্তু "মানুষ" হবি তোর
স্বপ্ন আত্মা আর মনে।
তোর পৃথিবী ততটাই সুন্দর
যতটা সুন্দর তুই।
তোর পৃথিবী ততটাই কদর্য
যতটা কদর্য তুই।
পৃথিবীকে সুন্দর দেখতে চাস
তো নিজেকে আগে সুন্দর করে দেখা।
পৃথিবীকে সাহসী দেখতে চাস
তো নিজেকে আগে সাহসী করে দেখা।
পৃথিবীকে সমান দেখতে চাস
তো নিজেকে আগে নিরপেক্ষ করে দেখা।
পৃথিবীকে প্রেমময় দেখতে চাস
তো নিজেকে আগে প্রেমিক করে দেখা।
সকলেই অন্যকে বদলাতে চায়
কিন্তু কেউই নিজেকে বদলাতে চায় না।
ফলে এ পৃথিবীর, কিছুই বদল হয় না।
আজ এখানেই থাক, তিন্নি।
তোকে আমি
এমনি করে আরো আরো লিখবো।
তুই ভালো থাকিস, সুখে থাকিস।
তোর মঙ্গল হোক।
ইতি
তোর অরুণ কাকু
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem