ভাবো- একটা গাছের মধ্যে, আকারে খুব বড় হওয়ার প্রতিভা আছে। কিন্তু সে গাছটা 'শক্ত' নয়। তবে কি হবে? মহীরুহের মতো বাড়লেও, গাছটা ঝড়ে ভেঙে পড়বে। না হলে- ঝড় থেকে বাঁচার জন্য, তাকে- মাটিতে লতিয়ে লতিয়ে চলতে হবে। লতিয়ে চললে, তাকে তুমি- 'হীন' লতা বলবে। তাকে তুমি 'মহীরুহ' বৃক্ষ বলবে না।
একজন মানুষের অসম্ভব প্রতিভা! অসম্ভব বুদ্ধি! কিন্তু বুকে তার সাহস নেই। কি হবে? ঝড়ে, সেও ভেঙে পড়বে। নাহলে- তাকে লতানো লতার মতো, হীন জীবন যাপন করতে হবে। তাকে তুমি তখন- ইঁদুর ছুঁচো টিকিটকি বলে ডাকবে, কিন্তু মহান এক মানব বলবে না।
এজন্যই- তোমাদেরকে আমি বারবার বলি, বুকে সাহস না থাকলে- বুদ্ধি, প্রতিভা, অর্থ, খ্যাতি সবই ভষ্মে ঘি ঢালা! সেজন্যই কলিজাকে আমি, মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ হিসেবে গণ্য করি। সেজন্যই আমি, আমার লেখায় 'বীর' কথাটা এতো বেশি ব্যবহার করি।
কাউকে এক কেজি চাল দিলে, বা একটা হীরের নেকলেস দিলে, তুমি যা না উপকার করবে; সেই মানুষকে, এক বিন্দু বেশি সাহসী হতে সাহায্য করলে, তুমি তার থেকে অনেক বেশি উপকার করবে।
ভিন্ন মানুষের ভিন্ন রুচি। কারও রুচি আমে, তো কারও রুচি আমড়ায়। এ নিয়ে আমি তর্ক করবো না। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি বীরপুজারী।আমি তাই নেতাজি আর স্বামীজিকে, আধুনিক ভারতবর্ষের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ মানব বলে গণ্য করি। ভারতে- বড় বড় পন্ডিত আছেন, দার্শনিক আছেন, লেখক আছেন- কিন্তু আর কাউকেই, আমি এতো বেশি পূজা করি না। তোমরা নজর করেছো- আমার প্রায় সব প্রবন্ধে, আমি নেতাজি আর স্বামীজির ছবি বা প্রসঙ্গ ব্যবহার করি। কেন? কারন- এই দুই মহামানবের বাণী আর কাহিনী, আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি সাহসী হতে সাহায্য করে। 'তু মুঝে খুন দে, হাম তুঝে আজাদি দুঙ্গা' 'জেগে উঠো হে সিংহ। তোমরা যে ভেঁড়া, সে ভ্রম তোমরা মুছে ফেলো '
আধুনিক ভারতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ দুই মানবই বাঙালী। অথচ বাঙালীই আজ সবচেয়ে বেশি মেরুদন্ডহীন ইঁদুরবাচ্চা! বাঙালীর এই অধঃপতন হলো কি করে?
বীর হও হে মানব, বীর হও। স্বার্থের জন্য, পা আর পাছা চাঁটা বন্ধ করো। ভাবতে পারো- লক্ষ লক্ষ মানুষ, একজন ধর্ষক 'বাবার' জন্য মিছিল করে, দাঙ্গা করে, আপন প্রাণ দেয়? ভাবতে পারো- চোর আর ডাকাতদের জন্য, সাধারণ বাঙালী বা বাঙালী বুদ্ধিজীবিরা- মিটিং করে, মিছিল করে? ভাবতে পারো- চোর আর ডাকাতদেরকে বাঁচানোর জন্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী- সরকারী খরচে, দেশের তাবড় তাবড় উকিল ভাড়া করে, দেশের আইনের বিরুদ্ধে লড়াই করে? কত নীচে নেমে গেছি আমরা! আমার তো গা বমি বমি করে!
সাইকোলজি আর দর্শনের তত্ত্ব খুঁড়ে খুঁড়ে, আমি যখন এর কারন অনুসন্ধান করি, এর কারন হিসেবে, আমাদের 'দাসত্ব প্রবৃত্তি' (SLAVE MENTALITY) উঠে আসে। এক কেজি চালের জন্য- কারও পচা গন্ধময় পশ্চাৎদেশ চাঁটতে, আমরা একটুও পিছু-পা হই না।
চীনারা আমাদের চেয়েও বেঁটে, কিন্তু তবুও চীনাদেরকে এখনো পর্যন্ত কেউ 'দাস' বানাতে পারে নি। চিঙ্গিজ খানও পারে নি। ইংরেজরাও পারে নি। অথচ চীনারা আমাদের থেকেও, কম আর মৃদুস্বরে কথা বলে। চীনও আমাদের মতো, একই ধর্ম পালন করে (বৌদ্ধ ধর্ম- হিন্দু ধর্মেরই সন্তান।আর সেখানেও মুসলমান আর খ্ৰীষ্টান আছে) ।
চীনারা চাকর সাজতে চায় না, অথচ ভারতীয়রা চায়। কবে ঘুঁচবে এ দুর্নাম? আগের দিনে তবুও নেতাজি, স্বামীজি, বিদ্যাসাগর, মাতঙ্গিনী হাজরা, ক্ষুদিরাম, আশুতোষ ইত্যাদি ছিলেন। আজকের দিনে তো, সবাই পচে যাওয়া- ইঁদুরবাচ্চা! তাদের পচে যাওয়া চরিত্রের দুর্গন্ধে, নাকে রুমাল দিতে হয়! আমরা কিভাবে- ঘৃণ্য, পা চাঁটা ফেতি কুত্তা হয়ে গেলাম? অরুণ মাজীকে তোমরা যত খুশি খিস্তি করো না কেন, অরুণ মাজী কিন্তু এই লড়াই ছেড়ে পালাবে না। অন্তত একজনকে হলেও- সিংহ শাবক বানিয়ে, তবে আমি মরবো। তার আগে নয়।
বলো ভাই বলো- তোমরা কে কবে, সিংহ শাবক হবে?
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem