উত্তরণ খন্ড ৪০ কার্গিল যুদ্ধ অবলম্বনে অরুণ মাজীর উপন্যাস
-----------------------------------------
হটাৎ প্রচন্ড এক বিস্ফোরণ। আমাদের গাড়িটা প্রায় নড়ে উঠলো। দেখি আমাদের গাড়ি থেকে, মাত্র একশো মিটার দূরে, কালো এক ধোঁয়ার কুন্ডলী।
ভয় পেলাম আমি। চমকে উঠলাম আমি। আমার এই ভীতি, আমার পাশে বসে থাকা, ড্রাইভার- মকর সিংয়ের চোখএড়ালো না। মনে হলো, মকর সিং কিছু বলতে গিয়ে যেন থেমে গেলো! আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম-
এটা কি বুলা? (গাড়োয়ালী সৈনিকদেরকে বুলা বলে ডাকা হয়।)
মকর, চোখে দুষ্টু হাসি হেসে বললো-
'ডরো মত সাহাব। পাকিস্তান আপকো স্বাগত করতা হ্যায়।
মানে?
'পাকিস্তান আর্টিলারি ফায়ারিং কর রহা হ্যায়।'
আর্টিলারি?
'ডরো মত সাহাব। উনলোগ কর রহা হ্যায়, তো আপ ভি করোগে।'
মানে?
'হামারা ইউনিট মে ভি, আর্টিলারি গান মজুদ হ্যায়, সাহাব। আপ হামলোগ কা, ডক্টর সাহাব হো। চাহো তো আপ ভি ফায়ার কর দো।'
মকর সিংয়ের দিকে চেয়ে বললাম-
অমিও?
'কিঁউ নেহি সাহাব? আপকো ভি, সভি প্রকার ফায়ারিং শিখা দেঙ্গে।'
হাবিলদার মকর সিংয়ের কথা শুনে হেসে ফেললাম আমি। হটাৎই, ধোঁয়ার কুন্ডলীর মতো সমস্ত ভয় উবে গেলো আমার।
ভারতীয় সেনাবাহিনী ভয় কাকে বলে জানে না। তারা শুধু জানে, কেউ আক্রমণ করলে, তাকে প্রতি আক্রমণ করতে হয়। আর সেই প্রতি আক্রমণ আরও বেশি তীক্ষ্ণ, আরও বেশি ভয়ঙ্কর হতে হয়।
কামানের গোলাটা যেখানে পড়েছে, তার কাছাকাছি এসে, গাড়িটা হটাৎ থামিয়ে দিলো মকর। আমার দিকে চেয়ে ও বললো-
'রুখিয়ে সাহাব। স্রেফ আপ কো লিয়ে, ম্যায় আর্টিলারি শেলকো ঢুনকে লে আতা হুঁ।'
আমি কিছু বলার আগেই, মকর চলে গেলো। মকর সিং, এক হাবিলদার। কিন্তু আমার রক্ষীবাহিনী তারা সবাই সিপাই অথবা নায়েক পদের। কাজেই তারা তাদের হাবিলদারকে বাধা দিতে পারলো না।
দু মিনিট পরেই মকর ফিরে এলো। হাতে, মোচা আকৃতির বড় একটা আর্টিলারি শেল। সেটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে ও বললো-
'ইয়ে পাকিস্তান আর্মি কী, ১৩০ মিমি আর্টিলারি শেল। আপকো বহুত জবরদস্ত ওয়েলকাম দিয়া উনলোগ।'
কথাটা শেষ করেই, মকর সিং গাড়িতে চড়ে বসলো। কোলের উপর শেলটা নিয়ে, ভালো করে দেখতে থাকলাম আমি। ওকে জিজ্ঞেস করলাম-
এর রেঞ্জ কত মকর?
'আঠাইশ কিলোমিটার।'
আঠাশ কিলোমিটার?
'হাঁ সাহাব।'
এবার বড় রাস্তা থেকে, আমরা ক্রমে ভারত-পাকিস্তান বর্ডারের কাছাকাছি এগোচ্ছি। বর্ডারের যত কাছাকাছি আসছি, পাহাড়ের উচ্চতাও তত বাড়ছে।
দেখলাম, পাহাড়ি রাস্তার দুদিকে ছোট এক গ্রাম। গ্রামে ঠাসাঠাসি বাড়ি নয়। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ির দূরত্ব বেশ কিছুটা।
গ্রাম ছাড়িয়ে যেতেই দেখলাম, ঘন পাইন গাছের জঙ্গল। জঙ্গলে ঢাকা উঁচু পাহাড়ি রাস্তা চড়তে চড়তে দেখলাম, সামনে এক চেক পোস্ট।
আমাদের গাড়ি, চেক পোস্টে থামলো। সিকিউরিটি কিয়স্ক থেকে পাহাড়ারত এক রক্ষী উঁকি মেরে আমাকে দেখলো। হাবিলদার মকর সিং তাকে উদেশ্য করে বললো-
'দেখ বুলা, হামারা ডক্টর সাহাব আয়া।'
মকর সিংয়ের কথা শেষ হতে না হতেই সিকিউরিটি কিয়স্ক থেকে জোরে আওয়াজ উঠলো-
'বদ্রী বিশাল লাল কি জয়।'
হাবিলদার মকর সিং আর আমার রক্ষীরা, আকাশে মুষ্টি ছুঁড়ে সমস্বরে চীৎকার করে উঠলো-
'বদ্রী বিশাল লাল কি জয়।'
ওদেরকে বলতে দেখে, আমিও বলে উঠলাম-
বদ্রী বিশাল লাল কি জয়।
মকর সিং আমার দিকে চেয়ে হাসলো। বললো-
'সাহাব, আপ আভি পাক্কা গাড়োয়ালী বন গয়া।'
মকর সিংকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমি বললাম-
বদ্রী বিশাল লাল কি জয়।
© Arun Maji
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem