ঠাম্মা বলে- প্রতিদিন ভগবানকে, প্রণাম করতে হয়। তাহলে নাকি, সকলে ভালো থাকে। ভগবান নাকি খুব সুন্দর, আর সে সকলকে ভালোবাসে। একদিন ঠাম্মা আর আমি, ফুল তুলছিলাম। আমি ঠাম্মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম-
ঠাম্মা ঠাম্মা, এই ফুল দিয়ে কি হয়?
ঠাম্মা বলেছিলো-
ফুল দিয়ে ভগবানকে পূজা করতে হয়। ভগবান তাহলে, আমাদেরকে, আরও বেশী ভালোবাসবে।
আমি কতগুলো ফুল নিয়ে বলেছিলাম-
ঠাম্মা, আমিও পূজা করবো।
ঠাম্মা বলেছিলো-
তা বেশ তো, তুইও পূজা করিস। ভগবানকে, যে কেউ পূজা করতে পারে।
আ- আমি এখনই পূজা করবো, ঠাম্মা।
ঠাম্মা মিষ্টি হেসে বলেছিলো-
ঠিক আছে, তুই তাই কর।
-
আমি ঠাম্মাকে একটা মিষ্টি করে চুমু খেয়ে, কতগুলো ফুল নিয়ে, মায়ের কাছে দৌড়ে গেছিলাম। মা তখন বসে বসে, উনুনে রান্না করছিলো। আমি মায়ের পায়ে সব ফুল ঢেলে, মাকে প্রণাম করে, হাতজড়ো করে বসে গেলাম। মা হেসে বললে-
এটা কি করছিস, অমল?
আমি বললাম-
ভগবানকে পূজা করছি?
মা- দূর পাগল! আমি কি, ভগবান নাকি?
আ- তুমি ভগবান হবে না কেন? ঠাম্মা যে বললে- ভগবান নাকি খুব সুন্দর, আর সে সকলকে ভালোবাসে। তুমি সুন্দর, আর তুমি সকলকে ভালোবাসো। তাহলে তুমিও তো ভগবান।
মা আমাকে বুকে নিয়ে, বলেছিলো-
ভগবান যে, আমার চেয়ে, আরও সুন্দর বাবা। সে যে আমাদেরকে আরও বেশী ভালোবাসে।
আ- কই, এরকম কাউকে তো কখনো দেখিনি। তুমিই সবচেয়ে সুন্দর, আর তুমিই সকলকে, সবচেয়ে বেশী ভালোবাসো।
-
আমার মা সেদিন, কেমন যেন কেঁদে ফেলেছিলো। কাঁদলে আমার মাকে, আরও বেশী সুন্দর দেখায়। আমাদের উঠোনে যে চাঁপা গাছ আছে, তার ফুলগুলোকে, বৃষ্টির পর আরও সুন্দর দেখায়। আমার মা কাঁদলে, মাকেও ঠিক তেমনি লাগে। আমি মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম-
মা তুমি কাঁদো কেন?
মা বলেছিলো-
তোকে খুব ভালোবাসি তো, তাই।
আ- ভালোবাসলে আবার, কেউ কাঁদে নাকি মা? তবে পল্টুর পায়ে, আজ কাঁটা ফুটেছিলো, পল্টু কেঁদেছিলো কেন?
মা- মানুষ ভালোবাসলেও কাঁদে, আবার যন্ত্রণা পেলেও কাঁদে।
আ- তুমি কোন কান্নাটা কাঁদো, মা?
মা আমার কপালে একটা হামি খেয়ে বলেছিলো-
তুই বল, আমি কোন কান্নাটা কাঁদি?
আমি মাকে একটা, লম্বা হামি খেয়ে বলেছিলাম-
তুমি শুধু, ভালোবাসার কান্না কাঁদো।
-
মাকে আমি ভালোবাসলেও, মায়ের অনেক কথা আমার বিশ্বাস হয় না। মা আমাকে বলে-
তোর বাবা, অনেক দূর দেশে গেছে; কয়েকদিন পরে আসবে।
কিন্তু এখনো তো বাবা আসে নি। একদিন হলো, পঞ্চাশ দিন হলো, তিনশো দিন হলো- তবুও বাবা আসে নি। মা আমাকে কেবল, মিছি মিছি সব কথা বলে। আমি পাক্কা জানি, মা-ই ভগবান। মা ছাড়া, আর কেউ ভগবান নেই। মা কেবল, মিছি মিছি কথা বলে।
-
আমার মায়ের কোলটা, ফুলের মতো নরম নরম। মায়ের কোলে বসতে আমার, দারুন লাগে। আর মা যখন আমায়, জড়িয়ে ধরে হামি খায়, তখন কি সুন্দর লাগে! আমি মাকে বলি-
মা, বাঁ গালে একটা; মা, ডান গালে একটা।
-
মা আমার, শুধু হামি খেতে থাকে। আর আমি শুধু গুনতে থাকি। এক, দুই, তিন হাজার, পাঁচশো হাজার, দশ-শো হাজার। ওরে বাব্বা কতো কতো হামি। মনে হয়- যেন সারাদিন শুধু হামি-ই খাই। মা হাঁপিয়ে গিয়ে বলে-
অমল, তোকে আর কতো হামি দেবো বাবা?
আমি বলি-
আর ছশো হাজার। ডান দিকের গালে, তুমি কম হামি খেয়েছো।
মা ক্লান্ত হয়ে বলে-
আমার মুখটা যে, ব্যথা হয়ে গেলো বাবা।
আমি মায়ের মুখে হাত দিয়ে বলি-
কোনখানটা মা? একটু টিপে দেবো?
-
আমি মায়ের কাছেই, হাত টিপা, পা টিপা, কপাল টিপা, মাথা টিপা শিখেছি। আমার মা- আমার পিঠ, মাথা, হাত, গা, পা- সব টিপে দেয়। মায়ের আঙুল-গুলোতে জাদু আছে, কখনো পড়ে গিয়ে আমার হাঁটুতে লাগলে- মা আমার হাঁটু-টা টিপে দেয়, আর একটু ফুঁ দিয়ে দেয়। ব্যস, সব ব্যথা, ভয়ে পালিয়ে যায়। মাকে সবাই ভয় পায়- জ্বর, গা বমি বমি- সব্বাই। জ্বর হলে, মা একটা কপালে হামি দিলে, জ্বর পালিয়ে যায়। পেটের অসুখ করলে, মা পেটে একটু ফুঁ দিয়ে দেয়; ব্যস, পেটের অসুখও বাপ বাপ করে পালিয়ে যায়। আমার মা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী। মায়ের সঙ্গে হাতিও লড়তে পারবে না। আর তেঁতুল গাছের সেই দৈত্য-টাও লড়তে পারবে না।
© Arun Maji অরুণ মাজী
Painting by Iman Maleki
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem