●
.
বেশ ক'সপ্তাহ আগে মা'র একটা ছবি খুঁজে পেলাম।
রোদে বসে আছেন, প্রাপ্তি বা বিজয়ের গৌরবে উদ্ভাসিত তার মুখমণ্ডল।
জ্বলজ্বল করছিলো সূর্য। কুকুরগুলো
তার পায়ের কাছে ঘুমাচ্ছে, যেখানে সময়ও নিদ্রা যাচ্ছিলো,
সমস্ত স্থিরচিত্রে যেমনটি থাকে শান্ত ও স্থির।
মা'র মুখমণ্ডল থেকে ধুলা মুছে ফেললাম।
ধুলা প্রায় সবকিছুই ঢেকে ফেলেছিলো, আমার কাছে মনে হলো এটা স্মৃতিকাতরতার স্থির আবছায়া যা শৈশবের সমুদয় ধংসাবশেষ রক্ষা করে।
পটভূমিতে, উদ্যান আসবাবের সমাহার, গাছপালা এবং ঝোপঝাড়।
আসমানের সূর্যটা নেমে এসেছে নিচে, ছায়াগুলো প্রলম্বিত আর ঘন-অন্ধকারময়।
যতই ধুলা সরাচ্ছি, ছায়াগুলো ততই স্পষ্ট হচ্ছে।
গ্রীষ্ম এসে পড়লো। বাচ্চাকাচ্চারা
গোলাপ বেড়ায় হেলনা দিয়েছে, ওদের ছায়াগুলো
একাকার গোলাপ ছায়াদের সাথে।
এই স্থানান্তর ও পরিবর্তন, এই মুছে-যাওয়াগুলোর বিষয়ে
আমার মাথায় একটা শব্দ এলো, এখন
সেটা হলো অবশ্যম্ভাবী—
হাজির হলো, আর তেমনই দ্রুততায় উধাও হয়ে গেলো।
এ কি অন্ধত্ব বা আঁধার, কপালের ফের, বিভ্রান্তি?
গ্রীষ্ম এলো, তারপর শরৎ। বদলে যাচ্ছে পত্রপত্রালির রং
হলুদ মাটি ও ব্রোঞ্জের মণ্ডজুড়ে শিশুগুলো একেকটা উজ্জ্বল দাগ।
.
২.
এসব ঘটনা ও ভাবনা থেকে যখন ধাতস্থ হলাম,
ছবিটাকে যে হালকা মলাটের বহু পুরনো বইয়ের ভিতর পেয়েছিলাম
ওর পৃষ্ঠাগুলোর ভিতরেই পুনস্থাপন করলাম,
ওটার অনেক পৃষ্ঠাতেই মার্জিনে
টীকা লেখা হয়েছিলো, কখনও কিছু কিছু শব্দে তবে বেশির ভাগই
উদ্দীপ্ত প্রশ্নাকারে এবং বিস্ময়সূচকতায়
যেমন ‘‘আমি একমত'' কিংবা ‘‘আমি নিশ্চিত নই, ধন্ধে পড়ে যাচ্ছি—''
লেখাগুলোর কালির রং জ্বলে গেছে। এ পাতায় ও পাতায় আমি বলতে পারবো না
কী সব ভাবনা খেলা করছিলো পাঠকের মনে
কিন্তু গভীর ক্ষতের মতো কলমের আঁচড়গুলো দেখে এর আবশ্যকতা
অনুভব করতে করছি, যদিও জল ঝরছিলো চোখে।
বইটা কিছুক্ষণ ধরে রাখলাম হাতে।
‘ভ্যানিসে মৃত্যু' (বইটার অনুবাদ)ছিলো সেটা।
ঘটনাক্রমে, লক্ষ করলাম পৃষ্ঠাটা, ফ্রয়েড যেমনটি বিশ্বাস করতেন,
কোনও কিছুই দুর্ঘটনা নয়।
এভাবেই ছোট্ট ছবিটাকে
পুনসমাধিস্থ করলাম, অতীত যেমন সমাধিস্থ ভবিষ্যতের গর্ভে।
একটা তিরচিহ্ন যুক্ত করে,
মার্জিনে দুটো শব্দ লেখা ছিলো: ‘‘বন্ধ্যাত্ব'' এবং, পৃষ্ঠার নিচের দিকে, ‘‘বিস্মৃতি''—
‘‘আর তার মনে হলো ওখানে ফ্যাকাসে ও মনোহর
তলবকারী তাকে দেখে মুচকি হাসলো আর ডাকলো ইঙ্গিতে...''
.
৩.
কত নিরিবিলি বাগানটা;
কোনও মৃদু হাওয়াও কর্নেলিয়ান চেরিকে এলোমেলো করছে না।
গ্রীস্ম এসে গেছে।
কী প্রশান্ত এটা
এখন তো বিজয়ী হয়েছে জীবন। ইতস্তত
সিকেমোর গাছের স্তম্ভগুলো
সজ্জিত কিশলয়গুলোকে
অনড় রাখছে,
নিচে লনটা
বহুবর্ণিল, মাতোয়ারা—
আর আসমানের মাঝবরাবর
দুর্বিনীত ঈশ্বর।
ব্যাপারগুলো, তিনি বলছেন। ওরা, ওরা বদলায় না;
প্রতিক্রিয়া বদলায় না।
কী চুপচাপ এটা, মঞ্চ
এবং দর্শকমণ্ডলীও; মনে হচ্ছে
নিশ্বাস ফেলাটাও অনধিকার প্রবেশ।
নিশ্চয় তিনি খুবই নিকটবর্তী,
ঘাসেরাও ছায়াহীন।
কী নিরিবিলি এটা, কত শুনশান,
পম্পেই নগরীর একটা বিকেলের মতো।
.
৪.
সিডাহার্স্টের একটা পার্কে বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে এলো বিয়েত্রিচ।
সূর্যটা রোদ ছড়াচ্ছে। উড়োজাহাজ
আসা-যাওয়া করছে মাথার উপর দিয়ে, শান্তিপূর্ণ কেননা যুদ্ধ শেষ।
এ তার কল্পনার জগত:
সত্য বা মিথ্যার কোনও গুরুত্ব নাই।
সদ্য পালিশ করা আর চকচক করছে—
এমনই সেই জগতটা। ধুলা
কোনও কিছুর উপরেই আস্তরণ ফেলেনি তখনও।
বিমানগুলো যাচ্ছে ফিরে আসছে, রোম
এবং প্যারিসের উদ্দেশে— পার্কের উপর দিয়ে উড়ে না গেলে
সেখানে যেতে পারবে না তুমি। সবকিছুই
চলে যাবে, থেমে থাকবে না কিছুই—
শিশুরা হাতেহাত রাখলো, গোলাপের ঘ্রাণ নিতে
ঝুঁকে পড়লো।
ওদের বয়েস পাঁচ ও সাত বছর।
অনন্ত, অসীম— সেটাই
সময় সম্পর্কে ওর উপলব্ধি।
ওকগাছগুলোতে আড়াল হয়ে থাকা একটা বেঞ্চে বসে আছে সে।
বহুদূরে, ভয় নিকটবর্তী হচ্ছে আর বিদায় নিচ্ছে;
ট্রেন স্টেশনে হওয়া আওয়াজ এ পর্যন্ত আসছে।
আসমান ছিলো গোলাপি ও কমলা, বয়স্ক কেননা শেষ হয়ে এসেছিলো দিনটা।
কোনও বাতাস ছিলো না। গ্রীষ্মের দিনটা
ওক-আকৃতির ছায়া ছুঁড়ে দিচ্ছিলো সবুজ ঘাসের উপর।
.
.
* লুইজ ক্লুখ [২২ এপ্রিল ১৯৪৩ - ]:
২০২০ সালে কবিতার জন্য নোবেলজয়ী মার্কিন কবি।
.
●
#বাঙলায়ন: #রহমানহেনরী; #Bengalized by #RahmanHenry
.
.
#LouiseGlückPoems
** জার্মান ভাষায় এ কবির নাম: লুইজ এলিসাবেট ক্লুখ
কোনও বাতাস ছিলো না। গ্রীষ্মের দিনটা ওক-আকৃতির ছায়া ছুঁড়ে দিচ্ছিলো সবুজ ঘাসের উপর।/// /// অসাধারণ অনুবাদ; পড়তে পড়তে মনে হলো আমিও যেনো সে গ্রীষ্মউদ্যানে করছি বিচরণ। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার এ সদ্য নোবেলজয়ী মার্কিন কবির কবিতার অনুবাদের জন্য যা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে এ মহৎ কবিকে জানতে।