৮|প্রশ্ন: বলা হয়ে থাকে শবে বারাতের উপর বর্ণিত সকল হাদীছ "দায়ীফ" বা দূর্বল বর্ণনা সুত্রের। দয়া করে এই বর্ণনা সুত্রের হাদীছ কতটুকু গ্রহণযোগ্য জানাবেন এবং এই বর্ণনা সুত্রের হাদীছ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ওলামায়ে উম্মতের অভিমত জানাবেন।
"দায়ীফ" উলুমে হাদীছের একটা পরিভাষা। পরিভাষা শাব্দিক অনুবাদে নই বরং সংজ্ঞা দিয়ে বুঝতে হয়। আমরা যদিও বাংলায় অনুবাদ করে "দূর্বল" বলি। কিন্তু এমনটি করা আনএকাডেমিক। হাদীছে দায়ীফ বলা হয়:
"কুল্লু হাদীছিন লাম তাজতামি' ফীহি ছিফাতুল হাদীছিল হাছান"
অর্থাত্: যেই বর্ণনা সুত্রে "হাদীছে হাছানের" শর্তগুলো পূর্ণ হয়নি তাকে দায়ীফ বলে।
(ইমাম নববীর তাকরীব, ইমাম ইরাকীর "নুকাত", ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতির "তাদরীব")
এই বর্ণনা সুত্রের হাদীছের বিষয়ে আয়িম্মায়ে হাদীছ তথা হাদীছ বিশারদদের অভিমত হচ্ছে:
"মুহাদ্দিসীন এবং ফোকাহায়ে কেরামের মতে- ফাজায়েল, তারগীব ও তারহীবের ক্ষেত্রে হাদীছে দায়ীফ দ্বারা আমল করা জায়েজ ও মুস্তাহাব"
(ইমাম নববীর আঝকার, পৃ: ২২, অধ্যায়: হাদীছে দায়ীফের উপর আমল প্রসংগ)
এটার উপরি মুহাদ্দিসীনদের ইজমা বা ঐক্যমত্য। তাই এই বিষয়ে আর কথা বাড়াচ্ছিনা।
৯|প্রশ্ন: কোন্ কোন্ প্রকারের লোক এই রাতের ফজিলত থেকে বন্চিত?
উত্তর:
এই অতিব বরকতপূর্ণ রাতেও কতিপয় লোক আল্লাহ্ তায়ালার দয়া-অনুগ্রহ থেকে বন্চিত হবে বলে বিভিন্ন হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে:
১- যারা শির্ক করে
২- যাদের অন্তর হিংসা আর ক্রোধের আগুনে ভর্তি
৩- অহংকারী
৪- মানুষ হত্যাকারী
৫- আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী
৬- পিতামাতার অবাধ্য সন্তান
৭- মদ্যপানে নেশাগ্রস্ত
৮- গিবত বা পরচর্চাকারী অর্থাত্ যারা সারাদিন বসে বসে অন্য মানুষের দোষত্রুটি বর্ণনা করে।
তবে কেউ যদি এই রাতে তাওবা করেন তাহলে আল্লাহ্ তায়ালা অবশ্যই তাওবা কবুল করেন এবং ক্ষমা করেন।
১০|প্রশ্ন: এই রাতের আমল এবং পরিহারযোগ্য কাজগুলি দয়া করে জানাবেন কি?
মনে রাখবেন প্রত্যেক জিনিসের একটা হাকিকত বা মৌলিকত্ব থাকে। এই রাতের মৌলিকত্ব হচ্ছে- তাওবা-ইসতিগফার এবং ইবাদত-রিয়াঝতের মাধ্যমে মহান প্রভুকে সন্তুষ্ট করা। কাজেই আমাদের উচিত হবে বন্ধুদের নিয়ে হাসি-তামাশা, আড্ডাবাজি, আতশবাজি বা ঘুরাঘুরি না করে রাতটির প্রতি যতাযত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক নিম্নলিখিত আমলগুলো করার চেষ্টা করা:
-নিকট আত্মিয়, পাড়া প্রতিবেশির কবর জিয়ারত করা
- বেশি বেশি তাওবা-ইসতিগফার করা
-কোরান তিলাওয়াত করা।
- সুরা ইয়াছিন, রহমান, মুলক্ পাঠ করা
- দোয়া ইউনুছ পাঠ করা
- বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা
- জিকির করা
-তাওবার নামাজ, সালাতুত তাসবীহ্
- তাহাজ্জুদ এবং ইবাদত বান্দেগীর মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করা।
11- প্রশ্ন: শবে বারাত উপলক্ষে আমাদের দেশে হালুয়া-রুটি তৈরি করা হয়। এটাকেও আজকাল কেউ কেউ নাজায়েয, বিদাআত বলে থাকে। কি বলবেন?
উত্তর:
এগুলো অজ্ঞতাপ্রসুত হাস্যকর কথাবার্তা। এই ধরনের কথাবার্তা ইসলামি শরিয়তের সাথে কৌতুক করার শামিল। এই জিনিসগুলো কৃস্টি-কালচারের অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম এগুলোকে স্বাচ্ছন্দে একোমোডেইট করে যদি শরিয়ত বিরোধী কোন ফেকটর্ না থাকে। কোন জিনিসকে হালাল এবং হারাম করার ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়তের নিজস্ব একটা স্টাইল আছে। এই জন্য হুযুর (দঃ)ইসলামি শরিয়তের ফরমেশন পিরিয়ডে তৎকালীন সময়ের সকল রীতিনীতি তুলে আস্হাকুড়ে নিক্ষেপ করেননি। বরং যা যা নেওয়ার মত ছিল নিয়েছেন, বাকিটা বাদ দিয়েছেন।
যাকিছু হারাম তার একটা লিস্ট আমাদেরকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। হালালের লিস্ট দেওয়া হয়নি। কারণ সবকিছুই হালাল যতক্ষণ না হারাম হওয়ার ব্যপারে কোন স্পষ্ট দলিল পাওয়া যায়। রাসুল (দঃ)এরশাদ করেন: যা আল্লাহ্ ও তদীয় রাসুল (দঃ)হারাম করেছেন শুধু তাকেই হারাম জানো, বাকি যেগুলোর ব্যাপারে চুপ থেকেছেন তা বৈধ।
মনে রাখবেন প্রত্যেক জাতির কিছ স্বকীয়তা ও বিশেষত্ব থাকে। মুসলিম জাতির অনেক বিশেষত্বের একটি হচ্ছে আপ্যায়ন। আর আপ্যায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ দিনে বিশেষ ক্ষনে হালুয়া-রুটির প্রচলন অনেক আগ্ থেকেই। ঠিক যেভাবে রমজানের ইফতারিতে ছুলা, পেয়াজু আর বেগুনির প্রচলন। তাছাড়া একটা ক্ষনকে মিনিংফুল করতে এই ধরনের আয়োজনের একটা প্রভাব থাকে। তাই এগুলো নিয়ে এই ধরনের কথা বলা মুর্খতার নামান্তর।
(collected))
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem