আকাশে সেদিন মেঘ ছিলো
মেঘে সেদিন বৃষ্টি ছিলো।
হেমন্তে সেদিন বাতাস ছিলো
বাতাসে সেদিন সুগন্ধ ছিলো।
সেদিন সবই ছিলো
কেবল মায়ের আমার
হৃৎপিণ্ডে স্পন্দন ছিলো না।
হটাৎই বুকটা আমার
ধড়াস করে উঠেছিলো।
দিনটা কেমন আঁধার হয়ে গেলো
চোখটা কেমন ঝাপসা হয়ে গেলো।
জীবনের কি যেন কি একটা
হটাৎই হারিয়ে গেলো।
দাদু এসে বললে-
"অমল, চল
আমরা তবে খেজুর পেড়ে আনি।"
"ঊহঃ কত খেজুর দাদু!
কি সুন্দর মিষ্টি!
এগুলো তপুকে দি-ই দাদু? "
খেজুর খেতে খেতে
হটাৎই কেঁদে উঠেছিলাম আমি।
কে জানে
কেন কেঁদেছিলাম আমি!
-
ওরা বলে-
কাকার হাত ধরে
মায়ের মুখাগ্নি নাকি আমিই করেছিলাম!
মিথ্যুক! ওরা বড্ড মিথ্যুক!
আমি কি কখনো
মায়ের মুখে আগুন দিতে পারি?
মাকে আমি কত্ত কত্ত ভালোবাসি!
ওরা সবাই মিথ্যে বলে।
সবসময়
রাশিরাশি মিথ্যে বলে।
কই
মা তো এখনো
দিদির বাড়ি থেকে ফিরলো না?
ঠাম্মাটাও পাজি
দাদুটাও পাজি।
বুল্টি দিদিটা বরং অনেক ভালো।
দিদি বলে-
"মা গেছে মেঘের দেশে।
যারা খুব সুন্দর হয়
কেবল তারাই যায় মেঘের দেশে।"
বুল্টি দিদিটা
কেমন যেন "মা, মা।"
ওই তো আমাকে দেখাশোনা করে।
দিদি আমাকে
কোলেও নেয়
গায়েও হাত বুলিয়ে দেয়
মাঝে মাঝে অবশ্য দুষ্টুমি করলে
কানটা আলতো করে মুলে দেয়।
তাও আবার ভীষণই আলতো করে।
বুল্টি দিদির কান মুলা খুব মিষ্টি!
ফুলের মতো নরম নরম হাত!
গায়ে সুড়সুড়ি দিলে
তক্ষুনি ঘুমিয়ে পড়ি!
বুল্টিদি, বুল্টিদি,
বলতো-
মুখটা মায়ের কেমন ছিলো?
নদীর মতো? না আকাশের মতো?
নাহঃ
আমার মনে হয় গাঁদা ফুলের মতো?
জানিস দিদি
উঠোনের সেই গাঁদা ফুলের গাছটা
আমায় "খোকা" বলে ডেকেছিলো।
আচ্ছা দিদি
মা আমায় খোকা বলেই ডাকতো;
তাই না?
আচ্ছা দিদি,
মায়ের গায়ে
কেবলই কি গাঁদার গন্ধ ছিলো?
গাঁদা আমার খুব পছন্দ, জানিস?
এই দেখ
আমার পকেটে কত্তো কত্তো গাঁদা।
শুঁকে দেখ
আমারও গায়ে গাঁদার গন্ধ।
একবার যদি মায়ের সাথে দেখা হয়
তো সব গাঁদাই, আমি মাকে দেবো।
আচ্ছা দিদি
মেঘের দেশে কি শুধু পরীই থাকে?
পেন্তী বুড়ী বলে কিনা-
বাচ্চাদের ওখানে যাওয়া, মানা!
আচ্ছা দিদি, তুইই বল-
মায়ের কি
একবারও আমাকে মনে পড়ে না?
(বিশ বছর পর)
বুল্টিদি,
কেমন আছিস?
জানিস?
আমার তোকে মনে পড়ে
গাঁদা ফুল মনে পড়ে।
কিন্তু
মাকে একদম মনে পড়ে না।
একদম না।
জানিস তুই?
মায়ের মুখটা কেমন ছিলো?
নদীর মতো? না আকাশের মতো?
© অরুণ মাজী
Painting: Iman Maleki
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem