পাগলাটে পশ্চিমা পবনের পদ্য ।। পি বি শেলী
এক.
শরতের প্রথম নিঃশ্বাস তুমি, ওহে পাগলাটে পশ্চিমা পবন,
তুমি সেই, অদৃশ্য উপস্থিতি যার, এনে দিলো মরাপাতাদের
এ সরণ, যেন ঘটে যাচ্ছে কোনও অশরীরী মায়াবী গমন,
হলুদ, এবং কালো, ফ্যাকাসেও, আর সেই লাল, অসুখের-
মহামারী-চিত্রিত হাজার হাজার পাতা! ও হাওয়া, সে সারথী তুমি,
যে ওদের টেনে নিচ্ছে অন্ধকার নিরানন্দ বিছানায় ঢের
যেন ওরা ডানাশীল বীজ, শুয়ে থাকবে ম্রিয়মান, ছুঁয়ে তলভূমি,
প্রত্যেকেই যেন তারা কবরে শবের মত শুয়ে থাকবে, যতক্ষণ
না, তোমার জমজ-ভগ্নি বসন্তটি, প্রবাহিত করে দিচ্ছে ফাল্গুন-মৌসুমী
স্বপ্ন-পৃথিবী জুড়ে যতক্ষণ না বেজে উঠছে তার মিষ্টি বাঁশি চিরন্তন
এবং ভরিয়ে দিচ্ছে (ঝাঁকের পাখির মত অগণিত কুঁড়িকে জাগিয়ে)
প্রাণবন্ত বর্ণে-গন্ধে সমতলভূমি আর ওই দূর পাহাড়ের মন;
উন্মাদনাময় যেন আত্মা এক, সঞ্চারিত হয়ে যাচ্ছে সবখান দিয়ে;
শোনো, ওই শোনো! যাচ্ছে, ধ্বংসের বার্তা আর সংরক্ষণব্রত বুকে নিয়ে!
দুই.
___
তোমারই প্রবাহ জুড়ে, পরিব্যাপ্ত আকাশের তীব্র উন্মাদনা,
ঝরাপাতাদের মত ছড়ানো ছিটানো মেঘ ছায়া করে আছে,
আন্দোলিত হয়ে যাচ্ছে আস্বর্গসমুদ্র এক পল্লবিত জটের ছলনা,
মেঘগুলি আলো আর বৃষ্টির দূত! বিস্তারিত হয়ে নাচে
বাতাসে বিক্ষুব্ধ ওই উত্তাল নীল জলরাশি ছুঁয়ে ছুঁয়ে,
যেন বা উজ্জ্বল চুল হঠাৎ লাফিয়ে উঠে যেতে চায় আকাশের কাছে
ক্ষিপ্র দেবী মীন্যাদের মাথা ছেড়ে; এমনকী, ম্লান ভূমিরেখা পার দিয়া
যেতে চায়, আনুভুমিকতা থেকে উলম্বের শীর্ষ ছুঁয়ে দিতে,
সমাগত আসন্ন ঝড়ের এই পরিপূর্ণ ঘটি। তুমিই মর্সিয়া
মৃতপ্রায়, নিঃশেষিত, বৃদ্ধ বছরের; যার কাছে এই শেষরাত্রি আচম্বিতে
হয়ে উঠবে সুবিশাল কবরখানার যেন গম্বুজ কোনও,
ধারক-আধার হবে তোমার সমস্ত শক্তিসমাবেশ বুকে ভরে নিতে
জলবাষ্পকণাদের, বায়ুমণ্ডলের সেই পরিণত গৃহ থেকে আবারও সঘন
কালো বৃষ্টি, এবং আগুন, শিলাবৃষ্টি বিস্ফোরিত হবে: ওই শোনো!
তিন.
___
তুমি সেই, যে জেগে উঠেছিলো গ্রীষ্মস্বপ্ন ফুঁড়ে,
যেথা শুয়ে থাকে, নীল ভূমধ্যসাগর,
স্ফটিকতূল্য, শান্ত, স্রোত জুড়ে,
তুমি ছিলে, সেই লাভাগড়া এক দ্বীপে, বা্ইয়ার তীরে ঘর,
নিদ্রাজুড়ে দেখেছিলে যত পুরনো মিনার, প্রাচীন প্রাসাদগুলি,
শিহরতি হয়ে, প্রগাঢ় তরঙ্গ-দিনে, ইচ্ছার ভেতর,
লকলক করে বেড়ে ওঠা সব আকাশী শ্যাওলা, এবং পুষ্পগুলি
কত যে মধুর, বিবরণ দিতে মূর্চ্ছা যায় এ মন! তুমি সেই,
যাকে, পথ করে দিতে আটলান্টিকের জলতল ঢেউ তুলি
ভাগ হয়ে গেছে অগণিত খাদে, আর তখনই অতল নিচেই
জলোদ্যানের শোভা এবং যত আগাছাবন, যারা পরে নাই কোনও
সরস পাতার পোশাকাদি, তোমার কণ্ঠধ্বনিকে চিনতেই
সহসাই ভয়ে জড়সড়ো তারা, ধূসর তাদের মনও,
হৃদিকম্পনে লুণ্ঠিত হলো স্বয়ং: ওই যে শোনো, শোনো!
চার.
ঝরাপাতা হতাম যদি আমি, হয়তো আমায় সরিয়ে নিয়ে যেতে;
দ্রুতগামী মেঘের ডানা হলে, উড়ে যেতাম তোমার সাথে সাথে;
তোমার শক্তিমত্তাতলে হাঁফিয়ে ছোটা ঢেউ, এবং দুহাত পেতে
অংশ হতাম দাপুটে ওই বলের, হয়তো কিছু মুক্তি ছিলো তাতে
ও অদম্য, যদিও মুক্তি তোমার চেয়ে কম! নিদেনপক্ষে দামী
বালকবেলাও ফিরিয়ে পেতাম যদি, এবং এ হাত রেখে তোমার হাতে
উর্ধলোকে, তোমার ছোটাছুটির যদি সঙ্গী হতাম আমি,
তখন যদি তাল মেলাতে হতো, আকাশমুখি তোমার গতি চিনে;
মন বলছে, তাল মেলানোই যেতো- - জীবন এতো হতো না সংগ্রামী
এই আকুতি লাগতো না আর করা, করছি যেমন সংকটে, দুর্দিনে;
আহ, ভাসাও আমায়, সমুদ্র-ঢেউ, ঝরাপাতা কিংবা মেঘের মত!
জীবন-কাঁটায় লটকে আছি, রক্ত ঝরে, যন্ত্রণা চিনচিনে!
কালের কঠোর ভারী শেকল, তাকেই বেঁধে করলো কাবু, অবননত
যে-জন ছিলো অহম নিয়ে, ক্ষিপ্র এবং আপোষবিহীন, তোমার মত।
পাঁচ.
আমাকে বানাও তোমার হাতের বীণা, হোক তা ওসব বনভূমির মত:
ক্ষতি কী এমন, পাতা ঝরে যাবে, আমার এ তনু হয়ে যাবে ফুরফুরে?
তোমার বিপুল নিনাদের মত স্বরসঙ্গতি যত
ঝরাপাতাদের মর্ম থেকে উৎসারিত হবে, শারদীয় সুরে সুরে,
বিষাদেও বড় মধুর শোনাবে কানে। ক্ষিপ্র তোমার আত্মাকে দাও ভরে
আমার এ আত্মাময়! তুমি হও আজ আমি, গতিমান সুদূরে!
আমার যত মৃতস্বপ্ন, ফেলে দাও দূরে, বিশ্বচরাচরে;
ঝরাপাতাদের মত; নতুন জন্ম ত্বরান্বিত করো!
এবং, আমার এই কবিতা, যেসব গভীর মন্ত্রোচ্চার করে,
ছড়িয়ে দাও, অনিঃশেষ এক হৃদয়ের কথা: শুধু এই মনে করো,
দগ্ধমনের ছাই ও অগ্নি থেকে; ছড়াও একে হতাশাদগ্ধ সব মানুষের মাঝে!
জাগাও ঘুমের দুনিয়াটাকে, এই ঠোঁট দিয়ে ভেরীটি তোমার ধরো,
ধ্বনিত করো, আগামের এই বাণী! ও পবন, বলো এই সাঁঝে__
শীত আসে যদি, বসন্ত কী দূরে থাকে লাজে?
* বাঙলায়ন: রহমান হেনরী
** BENGALIZATION of:
(Ode to the West Wind By Percy Bysshe Shelley)
asadharon onubaad. bakyohara hoye gechhi. asonkhyo dhonyobaad.
Apnar jonno ofuraan shuvokamona. Dear poet.