অরুণ মাজীর অশ্লীল প্রবন্ধ (Decent Or Indecent?) Poem by Arun Maji

অরুণ মাজীর অশ্লীল প্রবন্ধ (Decent Or Indecent?)

Rating: 5.0

​আমাদের পূর্বপুরুষ "আর্যভট্ট", বৃহস্পতিকে বগলদাবা করে, সূর্যের সাথে হুঁকো টানতেন। "সুশ্রুত", সার্জারির (SURGERY)এমন সব পদ্ধতি হাজার হাজার বছর আগে লিখে গেছেন, পৃথিবীর তাবড় তাবড় বিজ্ঞানী আর ডাক্তাররা, প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্য্যন্ত তা আবিষ্কার করতে পারেন নি।

গার্গী আর মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য মহাবিশ্বের সঙ্গে জীবের কি সম্পর্ক্য, সে বিষয়ে যে বিতর্ক করে গেছেন, তা দর্শন বা বিজ্ঞানের যে কোন আন্তর্জাতিক ডিবেট (DEBATE) কে এখনো হার মানায়। সারা বিশ্ব তখন, আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে শিক্ষা লাভের জন্য পড়ি মরি করে ছুটে আসতেন।

আমাদের পূর্বপুরুষরা, নক্ষত্র নিয়ে ভাবতেন। তারা অদৃশ্যকে দেখতে চাইতেন। অস্পৃশ্যকে ছুঁতে চাইতেন। অশ্রাব্যকে শুনতে চাইতেন, যা অনুভবের যোগ্য নয়, তাকে অনুভব করতে চাইতেন। আমাদের পূর্বপুরুষরা উলঙ্গের মধ্যে সৌন্দর্য্য খুঁজতেন। এজন্যই তারা ​বিভিন্ন ​গুহা আর ​মন্দিরের মধ্যে, নারী পুরুষের নগ্ন সৌন্দর্য্য এঁকে গেছেন।

নগ্নতার মধ্যে তার কোন উলঙ্গপনা বা বেহায়াপনা দেখেন নি। কেন? কারন তাদের চরিত্র মহত্ব, জ্ঞান​, ​ ​সততা, ​আর উদারতায় আবৃত ছিলো। কিন্তু আজ আমরা কি করছি?

একজন যুবক, একজন যুবতীকে আলিঙ্গন করেছে, আমরা তাই তাদেরকে বেধড়ক গণপ্রহার করছি। কেন? কারন- এখন আমাদের চরিত্রটা উলঙ্গ, আর বাইরেটা রঙিন কাপড়ে ঢাকা। ​

ধরো, আমার ঠোঁটে ক্যান্সার রোগ হয়েছে। আমি যদি লিপস্টিক লাগাই, তাতে "ঘা" হয়তো দেখা যাবে না। কিন্তু ভেতরের পচন তো চলতে থাকবে। মূল রোগ "ক্যান্সার" না সারিয়ে, আমি যদি সেই ক্যান্সারকে লিপস্টিক দিয়ে লুকাই, কি ঘটবে তাহলে? ক্যান্সার আমার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। আর আমার মৃত্যু ঘটবে।

বাঙালী তথা ভারতের "চরিত্রে" এখন ক্যান্সার। তাকে শাড়ি বা ধুতি দিয়ে ঢাকলে, তা কি সেরে যাবে? মিনি স্কার্টের পরিবর্তে ফুল স্কার্ট পরলে, সেই ক্যান্সার কি সেরে যাবে? রাস্তায় চুমু না খেলে, আমাদের চরিত্র কি সাধু হয়ে যাবে?

ঘোমটা ঢেকে আমাদের চরিত্রের নগ্নতা লুকালে, তা বরং আমাদের আরও বেশি ক্ষতি করবে। কেন? ক্যান্সার হলে, তার চিকিৎসা করো। ​ক্যান্সার লুকিয়ে রাখলে ক্যান্সার বাড়বে না? ঘোমটা ঢেকে ভারত যদি তার, চরিত্রের ক্যান্সার লুকাতে চায়, তাহলে তার চরিত্রের ক্যান্সার আরও বাড়বে না? যারা ধর্ষিত হয়েছে, তারা সবাই আপাদ মস্তক কাপড়ে ঢাকা ছিলো। তবুও তারা ধর্ষিত হলো কেন?

মিনি স্কার্ট পরলে সমাজ উচ্ছ্বন্নে যায় না। রাস্তায় চুমু খেলে সমাজ উচ্ছ্বন্নে যায় না। রাস্তায় উলঙ্গ হয়ে কেউ ঘুড়লে, সমাজ উচ্ছ্বন্নে যায় না। সমাজ উচ্ছ্বন্নে যায়, চরিত্রের ক্যান্সারকে যখন দেশের মাতব্বররা "এ সব কিছুই নয়। এসব সাজানো ঘটনা।এ সব সামান্য ঘটনা। ঐ মেয়েটা কেন স্বল্প পোশাক পরেছিলো? " ইত্যাদি শব্দ মালার লিপস্টিক দিয়ে ঢাকতে চায়। মন্ত্রী জানে, ধর্ষণ করলেও সে পার পেয়ে যাবে। তো সে ধর্ষণ করবে না? ধনী জানে, ধর্ষণ করলেও সে পার পেয়ে যাবে, তো সে ধর্ষণ করবে না? এখানে মিনি স্কার্ট বা রাস্তার চুমুর দোষ কোথায়?

দেশকে তোমরা অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, লোভ, হিংসা, করাপশন দিয়ে ঢেকে রাখবে। আর তোমাদের চরিত্রের সেই ক্যান্সারকে তোমরা স্কার্টের সাইজ দিয়ে ঢাকবে?

দুঃখ হয়, বুদ্ধ শঙ্করাচার্য্যের দেশের এই অধঃপতন। ভারতীয় হয়ে আজ ভারতীয়কে বিশ্বাস করতে পারি না। মেলবোর্ন সিডনিতে, কোন ভারতীয় ট্যাক্সি চালকের ট্যাক্সিতে উঠলে, মোবাইলে ম্যাপ নিয়ে বসতে হয়। নইলে তাদের কেউ হয়তো, স্রেফ "বিল" বানানোর জন্য, তোমাকে "ঘুড় পথে" নিয়ে গিয়ে তোমার "ফ্লাইট" মিস করাবে। কিন্তু ট্যাক্সি ড্রাইভার যদি কোন অস্ট্রেলীয়ান হয়, আমি নাক ডেকে ঘুমাই। এ কথা লিখতে গিয়ে চোখে জল এলো আমার। আমরা ভারতীয়রা আজ ঠিক এতটাই ক্যান্সারগ্রস্ত।

ভারত আজ কি বলতে চায়? খ্যামটা নাচো, কিন্তু ঘোমটা ঢেকে নাচো। চরিত্রে পতিতাবৃত্তি করো, কিন্তু ঘোমটা ঢেকেকরো। ঘোমটার নীচে যত বেহায়াপনা। শাড়ির নিচে "পতিতা" বৃত্তি। ধুতির আড়ালে "জি-গো-লো" বৃত্তি। কেঁচোর বাচ্চাগুলো, কথায় কথায় ধর্ম আর শাস্ত্রের বুলিকে টেনে আনে। ছুঁচোগুলো কি জানে, তারা হিন্দুত্বের হ, বা শাস্ত্রের শ টুকু বোঝে না? ভারত কি তাহলে অন্ধকার যুগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে না? ভারত কি মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে আঁকড়ে ধরছে না?

যারা হিন্দু ধর্ম আর দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা, তারা নগ্ন পুরুষ আর নগ্ন নারী​র ভাস্কর্য্য​, দেবালয় আর গুহাতে আঁকতে এতটুকু বিচলিত হয় নি, তাহলে আজকের ​উকুনমার্কা পন্ডিত আর ধর্মগুরুদের ​এতো গাত্রদাহ কেন?

মুখপোড়া নগেন মাস্টার,
অরুণ মাজী যদি ​উলঙ্গ হয়ে পথ হাঁটে, তাতে তোমার ক্ষতি কি? অরুণ মাজীর ​উলঙ্গপনা তোমাকে ​কি চাবুক মারে? না সে তোমাকে খেতে দিতে বলে? কোন উলঙ্গ মানুষকে, কখনো কাউকে আঘাত করতে দেখেছো? কোন উলঙ্গ মানুষকে, কখনো কাউকে ধর্ষণ করতে দেখেছো? কোন উলঙ্গ মানুষকে, কখনো কোন চুরি করতে দেখেছো? কোন উলঙ্গ মানুষকে, কখনো ধর্মে ধর্মে লড়াই লাগাতে দেখেছো? কোন উলঙ্গ মানুষকে, কখনো রাজনীতির স্বার্থের জন্য, কাউকে দিনের আলোতে খুন করতে দেখেছো? না, দেখো নি।

তবে কাকে এইসব ঘৃণ্য অপরাধ করতে দেখেছো? কাপড় পরা ভদ্দরলোককে। তাহলে তুমি নগ্নতাকে ঘৃণা করবে? অথবা কাপড়ের আবরণকে ঘৃণা করবে? ঘৃণা যদি করতেই হয়- তোমাদের রাজাকে করো। যে রাজা ধর্ষণকে সাজানো ঘটনা বলে ব্যাখ্যা করে। যে রাজা রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য, শিশু রিয়াজুল মোল্লার খুনে নীরব থাকে। যে রাজা বুলেটের ডগায়, ভোট আদায় করে।

মানুষ খুনকে তোমরা অশ্লীল বলতে পারো না,
দরিদ্র্য জনগণের টাকা যখন "মা সারদা" লুট করে, তখন তাকে তোমরা অশ্লীল বলতে পারো না,
ধর্ষণকে তোমরা অশ্লীল বলতে পারো না,
শিশু শ্রমকে তোমরা অশ্লীল বলতে পারো না,
শিশু কন্যাকে দেহব্যবসার জন্য ঠেলে দেয় যে দারিদ্র্য, সেই কৃত্রিম দারিদ্র্যকে তোমরা অশ্লীল বলতে পারো না,
অথচ অরুণ মাজী ​উলঙ্গ হলেই সে অশ্লীল?

মস্তিষ্কে ​তোমাদের ​ঘিলু? অথবা কেঁচোর বিষ্ঠা?

© অরুণ মাজী
Painting: John William Godward

অরুণ মাজীর অশ্লীল প্রবন্ধ (Decent Or Indecent?)
Saturday, May 5, 2018
Topic(s) of this poem: ancient,bangla,bangladesh,buddha,darkness,decency,indecency,knowledge,superstition,wisdom
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success