সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভোগা উগ্র জাতীয়তাবাদ, গোত্রীয়তাবাদ, বর্ণবাদ, সংস্কৃতিবাদ বা ধর্মবাদ হল ফ্যাশিজম
রাসূল দ.'র সংজ্ঞায় বলতে পারি, ফ্যাশিজম হল আসাবিয়াহ্।
কেউ যখন মনে করে যে পুরো পৃথিবীতে বা কোন একটা দেশ/অঞ্চলে তার গোত্র/জাতি প্রাকৃতিকভাবে শ্রেষ্ঠ, সুপিরিয়র বিল্ট- তখনি সে ফ্যাশিস্ট।
আবার একইভাবে, কেউ যদি মনে করে যে বংশগত বা গোত্রগতভাবে কোনও এক ধরনের মানুষ ক্ষুদ্র, অপূর্ণ, অক্ষম, সেটাও প্যাসিভ ফ্যাশিজম। যেমন, ইংরেজরা আগে সব অঞ্চলে গিয়ে সেখানকার আদিবাসীদের বলতো, ‘অ্যাবঅরিজিনি'। অ্যাবঅরিজিনি মানে হল যাদের অরিজিন বা মূল স্বাভাবিক নয় বরং অপূর্ণাঙ্গ বা অস্বাভাবিক।
রাসূল দ. বলেছেন, ফ্যাশিজম বা আসাবিয়াহ্ হল নিজের পূর্বপুরুষের প্রজননতন্ত্র মুখে নিয়ে রাখার মতই নিকৃষ্ট। অপরদিকে সারা পৃথিবীর সব জায়গায় মানুষ সমান প্রাকৃতিক ক্ষমতা ও অধিকার নিয়ে জন্মেছে- এটা হল মানবতা।
তাহলে ইসলাম ফ্যাশিজম বনাম মানবতায় কোনটাকে গ্রহণ করেছে? প্রথমত আসাবিয়্যাহ্ বা ফ্যাশিজমকে ইসলাম পুরোপুরি ডিনাই করেছে সেটা আমরা দেখছি। অপরদিকে কোনটাকে গ্রহণ করছে?
-আরবের উপর অনারবের কোনও শ্রেষ্ঠত্ব নেই, অনারবের উপর আরবের কোনও শ্রেষ্ঠত্ব নেই। (১, ৪০০ বছর আগে আরব ভূমির মাঝখান থেকে এমন কথা কারো মুখ থেকে বের হওয়া কি সম্ভব?)
-সাদার উপর কালো'র কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কালোর উপর সাদার কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই।
-তোমাদের মধ্যে সে-ই শ্রেষ্ঠ যার সৎকর্ম শ্রেষ্ঠ।
-তোমাদের মধ্যে সে-ই শ্রেষ্ঠ, যার খোদা সচেতনতা ও অপকর্ম করার বিষয়ে খোদাভীতি শ্রেষ্ঠ।
-একজন মুসলিম যদি একজন অমুসলিমের উপর অত্যাচার করে, তবে অত্যাচারিতের পক্ষই আমি নিব।
স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে, ফ্যাশিজমের বিপরীতে বিশ্ব মানবতার একক অভিন্ন আদর্শ আর কোথাও থাক বা না থাক, ইসলামে পুরোপুরি আছে।
নাৎসি জার্মানি, মুসোলিনির ইতালিই কি শুধু ফ্যাশিস্ট?
জার্মান বাহিনী যখন পোল্যান্ড নরওয়ে ফ্রান্স দখল করে ‘লিভিংস্পেস' বাড়াচ্ছিল, মানুষকে এভাবে কোনও কারণ ছাড়া দখল হত্যা করার বিরুদ্ধে কিন্তু জার্মান গণমানুষ ফুঁসে ওঠেনি। বরং আন্তরিকভাবে জানপ্রাণ দিয়ে ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সমর্থন দিয়েছে। কারণ তারা ফ্যাশিজমে বুঁদ হয়ে ছিল।
জাপানি বাহিনী যখন কোরিয়াকে দখল করে, কী বলেছিল? তোমরাও সুপিরিয়রের বাচ্চা। তোমরাও শ্রেষ্ঠ'র বংশধর। এই দ্যাখো, আসলে তোমরা হলে জাপানিদের বংশেরই একটা শাখা। দ্বিতীয় এবং অব-শাখা যদিও। তবু শাখা তো! বার্মা-জাভা-মাঞ্চুরিয়ায় কী বলেছিল তারাই ভাল জানে।
এইযে জেনেটিকভাবে শ্রেষ্ঠ'র বাচ্চা হওয়ার কুমীরের বাচ্চা দেখানো স্বপ্ন- এইটাই ফ্যাশিজম।
যে শ্রেষ্ঠ'র বাচ্চা হয়ে কুমিরের বাচ্চায় নাম লেখানোর জন্য নাস্তিক-অজ্ঞেয়বাদী-খ্রিস্টান তিন ধরনের মানুষই ঝাঁপিয়ে পড়ছে ইহুদি খাতায় নিজের সন্তানদের বিয়ে দিয়ে নাম লেখানোর খেলায়।
জেনেটিকভাবে কোনও মানুষের উপর কোনও মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নেই- এটাই হল অ্যান্টি-ফ্যাশিস্ট মানবতা।
মুসোলিনির ইতালিতে হাওয়া থেকে ফ্যাশিজম আসেনি। হাজার হাজার বছরের রোমান সভ্যতার প্রাইডই দাঁড়িয়ে ছিল গ্রেকো-রোমান সুডো ফ্যাশিজমের উপর।
ফ্যাশিস্ট শুধু কি জার্মানরাই ছিল? ককেশিয়ান (ইউরোপীয় সাদা)দেহের আমেরিকান বা অস্ট্রেলিয়ানরা কী করেছে এবং এখনো করছে অন্য দেহগঠনের মানুষের উপর? এখনো তাদের অনেকের কাছে পূর্ব এশিয়ান এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ানরা ইয়েলো মাংকি।
ফ্যাশিজমের সাথে জায়নিজমের কোনও পার্থক্য আছে কি? কোন্ সে চেতনা, একটা তরুণ নেটগামী ইজরায়েলিকে চোখ বুজে থাকতে দিচ্ছে ফিলিস্তিনি হত্যা ও ধ্বংসে। কোন্ চেতনা তাদের জোর করে ভূমি ও জীবন দখল করা হালাল করেছে? এটাই কি উগ্র জাতীয়তাবাদ ও গোত্রবাদ নয়?
জায়নিস্টদের প্রধান কথাই হল, পবিত্রভূমি জেরুজালেমে তাদের প্রাধান্য। একক অধিকার। তারা শ্রেষ্ঠ জাতি এবং তাদের সেবার জন্য, তাদের শাসনের জন্য জেন্টাইলদের বানানো হয়েছে। শুধু জায়নিস্ট ইহুদিরা নয়, জায়নিস্ট ইহুদি বংশের নাস্তিকরা এবং জায়নিস্ট অ-ইহুদি বংশের নাস্তিক ও অন্যান্যরাও কি ফ্যাশিস্ট নয় যখন তারা বলে, ‘ইহুদিদের সংখ্যা এত, কিন্তু তবু তাদের মধ্যে এত নোবেল, আর মুসলিমদের সংখ্যা এত, তবু তাদের মধ্যে এত নোবেল। ইহুদিরাই কি শ্রেষ্ঠ নয়? '
মার্কিন কমিশন্ড অফিসার হিসাবে যখন থেকে কালোরা নিয়োগ পাবার অধিকার পেলো, তারপর ৫০ বছর কী করেছিল তারা ওয়েস্ট পয়েন্ট মিলিটারি একাডেমিতে? চারটা দীর্ঘ বছর যেসব কালো ও অশ্বেতাঙ্গ মার্কিন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট হওয়ার জন্য ট্রেনিং নিতো তাদের সাথে ৯৮% মেজরিটির শ্বেতাঙ্গরা কথা বলতো না। একটা কথাও না। এক দিনও না।
মার্কিন সেনাবাহিনী যখনি কোন দেশে আক্রমণ করে, আগে তাদের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয় উগ্র ফ্যাশিজম। তারও আগে সেনা ট্রেনিঙেই। ‘ডার্টি এইরাবস' নোংরা আরব!
প্রকৃতপক্ষে জাতিগতভাবে অবদমনের হাতিয়ার হলো ফ্যাশিজম। ফ্যাশিজম না থাকলে- জাতিগত, ভাষাগত, ধর্মগত, গোত্রগত, বর্ণগত ঘৃণা না থাকলে, নিজেকে শ্রেষ্ঠ এবং যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তাকে অপূর্ণাঙ্গ বা অ্যাবঅরিজিনি মনে করার ট্রেনিং না থাকলে- যোদ্ধারা লড়াই করার স্পিরিট পাবে কোথায়?
কোন্ সে জাদুমন্ত্রে রোহিঙ্গাদের মেরেকেটে বিনাশ করে দেয়া হল এবং পুরো বার্মিজ জনগণ তাদের সমর্থন দিল? কোন্ মন্ত্র পাকিস্তানিদের গণসমর্থন যুগিয়েছিল একাত্তরের গণহত্যায়? বার্মিজদের নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করা। একটা ভূমির উপর নিজেদের একক এথনিক অধিকার দাবি করা। পাকিস্তানি বা পাঞ্জাবিদের গায় গতরে বাঙালি থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা। এই হল দেশে দেশে যুগে যুগে ফ্যাশিজম।
ফ্যাশিজম তাই আগ্রাসনেও গণমত পাবার একমাত্র হাতিয়ার।
ফ্যাশিজম যুদ্ধ'র একমাত্র হাতিয়ার।
(collected and little edited))
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem