উলঙ্গবাদী অরুণ মাজীর উলঙ্গপনা (Naked Truth) Poem by Arun Maji

উলঙ্গবাদী অরুণ মাজীর উলঙ্গপনা (Naked Truth)

রঙটা কেবল উপর থেকেই ​ভিন্ন। ভেতরে​​ খেলাটা ​কিন্তু একই। কখনো তা "ধর্ম" নামক ঘোমটার আড়ালে। কখনো তা "শ্লীলতা" নামক শুচিতার আড়ালে। কখনো তা "ন্যায়" নামক ​নিষ্ঠার আড়ালে।

কি সেই খেলা? সবল দ্বারা দুর্বলের পীড়ন​, ​ দুর্বলের রক্তপান​, ​দুর্বলের নরমাংস ভক্ষণ । ধর্ম, শ্লীলতা, ন্যায়- ইত্যাদি শব্দগুলো আসলে, সবলের 'শাসনযন্ত্র", "পীড়ণযন্ত্র"। কি রকম?

হাজার হাজার বছর আগে, ক্যাথলিকরা কোন এক অজুহাত খাড়া করে, স্বাধীন চিন্তার কোন নারীকে, হাত পা বেঁধে সমুদ্রে ফেলে দিতো। মেয়েটা যদি ডুবে মরে যেতো, তবে সে "পূণ্যবতী"। ​​

আর কোন প্রকার ঐশ্বরিক বলে মেয়েটা যদি বেঁচে যেত, তবে তাকে নাম দেওয়া হতো পাপী। ধর্মগুরুরা তখন​, ​ সেই মেয়েটির উপর, ​গ্রামের মানুষকে হিংস্র ​কুকুরের মতো লেলিয়ে​ ​দিতো। গ্রামের মানুষরা​, ​ ​মেয়েটিকে নৃশংসভাবে ​কুপিয়ে, থেঁতলে থেঁতলে খুন করতো।

যারা এই নৃশংসতা শুনে শিউরে উঠছো, তাদেরকে বলি- ভেবো না​, ​ ​আমরা ​সেই বর্বরতা ভুলে গেছি। এ​আজও এই বাংলায়, এই ভারতবর্ষে, "ডাইনী" অপবাদে নিরীহ নারীকে ঠিক এমনই নৃশংসভাবে খুন ​করা ​হয়। এখনো টাটকা তোমাদেরস্মৃতিতে, কলকাতার ডাক্তারি ছাত্ররা "চোর" অপবাদে কিভাবে একজন মানসিক রোগীকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে খুন করলো।

আমি তোমাদেরকে বারবার বলি, ধর্ষণের কারন মিনি স্কার্ট নয়। ধর্ষণের কারন রাস্তার চুমু নয়। আসল কারন, সবল দ্বারা দুর্বলের মাংস ভক্ষণ। কোন অভিনেত্রী ​প্রথম ​যখন সিনেমাতে আসে, প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা পরিচালকরা দুর্বল সেই নবাগতাকে ধর্ষণ করে। কিন্তু সেই নবাগতা অভিনেত্রী, পরে যখন জনপ্রিয় ​আর শক্তিশালী হয়ে উঠে, তখন তাকে ​আর কেউ ​ধর্ষণ করতে সাহস পায় না।

নারীরা​ও যখন সবল হয়ে উঠে, ​ ​তারাও ​তখন ​পুরুষকে ধর্ষণ করে। কয়েকবছর আগে, সাউথ আফ্রিকাতে, কয়েকজন মেয়ে একটি যুবককে গাড়ির মধ্যে উঠিয়ে, নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করলো।

কেন তোমরা রাস্তার দুর্বল পকেটমারকে পিটিয়ে খুন করো, ​অথচ বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী, সুব্রত রায় সাহারা​- ইত্যাদির হয়ে ওকালতি করো​? ​কারন- দুর্বলকে মেরে তোমরা পার পেয়ে যাও। আর বিজয়া মালিয়া তোমাদের নাগালের বাইরে। ​

ন বছরের ​এক ​শিশু​, খিদের জ্বালায়দোকান থেকে রুটি চুরি করলে, তাকে তোমরা পাথর দিয়ে থেঁতলে​ থেঁতলে মারো। কিন্তু চৌদ্দ হাজার কোটি টাকা চুরি করা​, ​ "মা সারদা"কে তোমরা, "মমতাময়ী মাতা" উপাধিতে ভূষিত করো। তাকে "ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করা হোক", এই দাবীতে তোমরা, কবি সাহিত্যিক অধ্যাপক ভাইস চ্যান্সেলর ইত্যাদি সহ, রাস্তাতে মিছিল করো। "মা সারদাকে তোমরা "মহিয়সী নারী" উপাধি দাও। রবি ঠাকুরের চেয়ে বিশগুণ উঁচু, ফ্লেক্স/ব্যানার, তোমরা "মা সারদার" জন্য টাঙাও। এসব তোমরা কেন করো? ​ শিশু হত্যা করলে, তোমরা পার পেয়ে যাও। আর মমতাময়ীর লেঠের বাহিনী তোমাদেরকে চাবুক মেরে রাখে। ​

রবি ঠাকুরের লেঠেল বাহিনী নেই, কিন্তু "মা সারদার" আছে। রবি ঠাকুরের পুলিশ আর প্রশাসন নামে পীড়ন যন্ত্র নেই, কিন্তু"মা সারদার" আছে। রবি ঠাকুরের "কেষ্টা" নামের অবতার নেই,কিন্তু"মা সারদার" আছে। রবি ঠাকুর সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে রক্ত পান করে সিংহাসনে দখল করে নি,কিন্তু"মা সারদা" করেছে। রবি ঠাকুরের, সাইকেল বা দু কেজি চাল দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিন্তু "মা সারদার" আছে। এজন্যই রাস্তাতে​, ​ রবি ঠাকুরের দু ইঞ্চি ফটো। আর মা সরদার দুশো ফুট উঁচু ফ্লেক্স আর ব্যানার।

যার ডান্ডা, তারই ঝান্ডা। "ন্যায়" শব্দের আড়ালে, কেবল "ডান্ডা" আর "বুলেটের" অট্টহাসি। তাই না?

রাস্তার নিরীহ নারী ডাইনী কেন? কারন- সে সবচেয়ে দুর্বল। মানসিক এক রোগীকে, চোর অপবাদে ডাক্তারী ছাত্ররা খুন করে কেন? কারন- সেই রোগীটি দুর্বল। নারীরা ধর্ষিত হয় কেন? কারন তারা শারীরিক আর অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল।

নারীরা যদি কোনদিন শারীরিক বা অর্থনৈতিক ভাবে সবল হয়ে উঠে, তারাও তখন পুরুষকে ধর্ষণ করবে। অভিজাত/ধনী মেয়েরা এখন "জিগোলো" ভাড়া করে তাদের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। সেও সেই ক্ষমতার দম্ভ।

অরুণ মাজীকে কোনদিন উলঙ্গ হেঁটে যেতে দেখলে, তাকেও হয়তো তোমরা একদিন "ডাইন" অপবাদে পিটিয়ে খুন করবে। কেন? কারন- "মা সারদা" বা ধর্মগুরুদের মতো, অরুণ মাজী সবল নয়। অরুণ মাজীর লেঠেল বাহিনী নেই। অরুণ মাজীর কাগজ নামে প্রচারযন্ত্র নেই। অরুণ মাজীর চাটুকার বাহিনী নেই।

"ধর্ম, শ্লীলতা, ন্যায়" ইত্যাদি শব্দগুলো দুর্বল মানুষকে কেবল শোষণ করে, শাসন করে, তাদের রক্তপান করে। ​"ধর্ম, শ্লীলতা, ন্যায়" ​শব্দগুলো দুর্বল দরিদ্র্য মানুষকে যুগের পর যুগ কেবল চুঁষে চুঁষে খাচ্ছে। কিন্তু তাদের হয়ে বলবে কে? সাংসদরা বছরে ১০ দিন উপস্থিতি দিয়ে কোটি টাকা বেতন না পেলে, কাগজে তা প্রতিদিন ছাপা হয়। কিন্তু গফুর মিঞা দারিদ্র্যের জ্বালায় আত্মহত্যা করলে, বা বিন্দী বুড়ী অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরলে, তাদেরকে নর্দমায় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। কিসের ধর্ম তোমাদের? কিসের শ্লীলতা তোমাদের? কিসের ন্যায় তোমাদের?

"ধর্ম, শ্লীলতা, ন্যায়" ইত্যাদি শব্দ দিয়ে মানুষ কি কখনো ধার্মিক বা শ্লীল হয়েছে? নাহঃ। ​বরং মানুষ আরও নিষ্ঠুর হয়েছে। ​

যারা ধার্মিক- তারা রাম নামাবলী না চড়িয়ে, বা নামাজ পাঠ না করেও ধার্মিক। যারা শ্লীল- তারা উলঙ্গ সাজেও শ্লীল।

আমি কিন্তু আলো দেখতে পাচ্ছি। কেন? এখন অনেক ছোট্ট ছোট্ট ছেলে মেয়েরা, তাদের নিজেদের মতো করে ভাবতে শিখছে। তারা নেতা বা ধর্মগুরুর বাণীকে অন্ধভাবে আর গ্রহণ করছে না। তাদের কেউ কেউ কেউ আবার, অরুণ মাজীর মতো উলঙ্গবাদী হতে চাইছে।

এসো হে নতুন প্রভাত, এসো তুমি মম চেতনায়।

© অরুণ মাজী
পেন্টিং: অমিত ভর

উলঙ্গবাদী অরুণ মাজীর উলঙ্গপনা (Naked Truth)
Wednesday, May 9, 2018
Topic(s) of this poem: cruelty,culture,nakedness,powerful,truth,weakening,weakness
COMMENTS OF THE POEM
Rajib Roy 14 May 2018

Sir, keep it up ..... I am with you .

0 0 Reply
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success