বিপ্লবীরা শুধু বিপ্লবী। তারা কখনো রাজনীতিক নন। বিপ্লবীরা দেশ আর দেশের মানুষের জন্য প্রাণ দিতে পারে, কিন্তু রাজনীতিকরা তা পারে না। রাজনীতিকরা কেবল, বিভিন্ন ঘোমটার আড়ালে দেশের মানুষের প্রাণ নিতে পারে। আর এই কারনেই, সুভাষ বসু একজন যুগশ্রেষ্ঠ (এবং পৃথিবীশ্রেষ্ঠ)বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিক রয়ে গেলেন।
গান্ধী বা নেহেরু ছিলেন রাজনীতিক। তাই দেশের রাজদন্ড তারা হাতে পায়। জাতির জনক আখ্যা তাদের কপালে জুটে। স্বাধীনতার আগে, বাংলাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন অনাহারে কাতরে কাতরে মরছে, ব্রিটিশরা তখন গাদা গাদা খাদ্য ভর্তি জাহাজ, আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে। আর সেই সময় গান্ধীজি লক্ষ মানুষের সমাগমে অহিংসার ঢাক পেটাচ্ছেন। অহিংসা নিশ্চয়ই মহৎ গুন। কিন্তু কত লক্ষ মানুষের রক্তে আঁকা, গান্ধীর বুকে "অহিংসার পূজারী", "অহিংসার জনক" তকমা?
মরে একজন, আর তার হাড় আর রক্ত দিয়ে ডুগডুগি বাজায় আর একজন। রাজনীতিকরা চিরকালই সেই ডুগডুগি বাজানো লোক। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাস, বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের ইতিহাসও বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। ভারতবর্ষের পরাধীন-করণ, তাও সেই একই রকমবিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস।
আমি অরুণ মাজী, কোন ইতিহাসবিদ নই। তবে আমার কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে একটু ধারণা আছে। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি, এতো বেশি বিশ্বাসঘাতকতার উদাহরণ তুমি আর অন্য কোন দেশে পাবে না। ভারতবর্ষে এতোবিশ্বাসঘাতক কেন?
ব্যক্তিগতভাবে, আমি রাজনীতিকদেরকে ঘৃণা করি। তা যে কোন পার্টির রাজনীতিক হোক না কেন! আমার এই ঘৃণার কোন ব্যতিক্রম নেই।আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- ভারতীয়রা না জাগলে, ভারতীয় রাজনীতিকরা দেশটাকে কুকুরের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে। কোন রাজনৈতিক দলই এর ব্যতিক্রম নয়। কমিউনিজম, বা সোশ্যালিজম, বা ন্যাশনালিজম- তা যে কোন "ইজম" হোক না কেন, স্বার্থপর পা চাঁটা বিশ্বাসঘাতকদের জন্য কোন "ইজম"ই এ দেশে কাজ করবে না।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি সব"ইজম"কেই ভালোবাসি। পৃথিবী বা কোন জাতির উত্তরণের জন্য সব "ইজম"-এরই দরকার। বহুত্ব যেখানে নেই- উত্তরণ সেখানে নেই, সৃষ্টি সেখানে নেই, মানুষের প্রতি ন্যায় বিচার সেখানে নেই। এ জন্যই আমেরিকা বা ইউরোপ- উত্তরণের ধাপে এতো এগিয়ে। আমরা তাদেরকে যত নিন্দাই করি না কেন, তারা যতখানি বহুত্বকে শ্রদ্ধা করে, আমরা তা কখনোই করি না। এজন্যই তো আমাদের দেশের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা সে সব দেশে গিয়ে, প্রথম প্রথম পেট্রল পাম্পে কাজ করতেও পিছ পা হয় না।
আমার সেই পুরানো কথা আবার বলতে হয়। কুকুরের দেশে কুকুর রাজা হয়। উল্লুকের দেশে উল্লুক রাজা হয়। সিংহের দেশে সিংহ রাজা হয়। কুকুরের দেশে সিংহ রাজা হবে কি করে? ঘটনাক্রমে সেই দেশে যদি দু-একটাসিংহও জন্ম নিয়ে ফেলে, তবুও সেই এক দুজন সিংহকে সহস্র সংখ্যার কুকুর রাজা করবে কেন? কুকুরের অভ্যাস চাঁটা। সিংহ রাজা হলে, কুকুর শাবকদের চাঁটার ব্যাঘাত ঘটবে না? এই জন্যই ভারতবর্ষের মতো দেশে প্রতিভাবান গুণী মানুষ থাকলেও, তারা কখনো রাজদন্ড হাতে পাবে না। যেমন পায় নি সুভাষ বসু।
কঠিন কথা শুনতে তোমাদের খারাপ লাগে। কিন্তু কঠিন কথা বলতে আমার বুক ফাটে। তবুও আমি বলি। অনেক সময় চোখে জল নিয়ে বলি। কেন বলি জানো? ভারতের জন্য আমার বুক ফাটে। ভারতীয়দের বিবেকে চাবুক না মারলে, ভারতীয়রা কখনো জাগবে না। জনগণের উদ্দেশ্যে লেখা ছাড়া, ব্যক্তিগত জীবনে আমি কখনো, কারও উদ্দেশ্যে কোন কটু বা রূঢ় কথা বলি না।
আমি দীর্ঘ জীবনের সৈনিক। সৈনিকের নিষ্ঠা নিয়ে আমি সেই নিয়ম মেনে চলি।আর সৈনিকের সাহস নিয়ে আমি আমার লেখায় রূঢ় কথা বলি। আমি ক্ষমা প্রার্থী। তবুও আবার আমি রূঢ় কথা লিখবো। সুভাষ বসুর মুখটা হৃৎপিণ্ডের মধ্যে এমন ভাবে গাঁথা আছে, যা আমাকে বারবার উত্যক্ত করে তুলে। আমার হৃৎপিন্ডটা চিরে দেখো, দেখবে- সুভাষ বসু আজও সেখানে কাঁদছে। সুভাষ বসুকে যদি বুক থেকে উপড়ে ফেলতে পারতাম, তা হলে তোমাদের উদ্দেশ্যে আমাকে রূঢ় কথা লিখতে হতো না।
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem