সিগারেটে সময় পুড়ে
ক্রোধ হিংসা লালসা পুড়ে না।
অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ
চোখের সামনে ধোয়াঁর কুন্ডলী পাকিয়ে উড়ে
অথচ সমস্যার সমাধান খুঁজে পাই না।
মানুষ কি জানে
ক্রোধ হিংসা লালসা না পুড়লে
সমস্যা কখনো মেটে না?
জানে। আলবৎ জানে।
মানুষের চৈতন্য
সদ্য বিবাহিত যুবকের মস্তকদেশের মতো।
তন্বী স্ত্রীর পুষ্পকুসুমিত স্তনযুগল থেকে
মাথা তার উর্দ্ধমুখী হয় না।
লালসার বক্ষে এতোটাই মগ্ন সে
ঈশ্বর হেঁকে হেঁকে কড়া নেড়ে গেলেও
কানে তার ঢুকে না।
আমিও মানুষ। বনমানুষ তো নই।
হাতের সিগারেটে সময় পুড়ে
দুঃখ পুড়ে না। যন্ত্রণা পুড়ে না।
মুখ ঝাপটা দিয়ে মালবিকা হাঁকে-
"সারাদিন সিগারেট ফুঁকলেই হবে?
ঘরে যে চাল নেই! ডাল নেই! "
সিগারেট? কোথায় সিগারেট?
আমি তো ভাবছি।
জানো মালবিকা? ভাবছি ব্যবসা করবো।
কতদিন আর অন্যের গোলামী করবো বলো?
ভাবছি এবার তোমাকে
সুন্দর একটা নেকলেস কিনে দেবো।
টিকটিকি ভেংচি কাটে!
এ বাড়ির আরশোলা ইঁদুর ছাড়পোকাও জানে-
এর আগে তিনশোবার আমি
মালবিকাকে নেকলেস দেবো বলেছি।
সিগারেটে দৈহিক বিষ থাকলেও
মানসিক সুখ আছে অনেক।
ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে
আপন অক্ষমতা ঢাকা যায়
নপুংসকতা ঢাকা যায়।
সিগারেট আমি খাই না
সিগারেট আমাকে খায়।
একটু একটু করে আমাকে সে শ্মশানের পথ দেখায়।
শ্মশানে ঘৃণা নেই আজ
বরং আছে, নিগূঢ় ভালোবাসা।
হরি আজকাল প্রায়ই আসে
আমার হাতে সাজা হুঁকো খেতে চায় সে।
ভালোবেসে ওকে বলি-
হুঁকো তো আমি কবেই ছেড়ে দিয়েছি হরি!
হরি দুঃখ করে। সে বলে-
"কেবল তোর হাতে হুঁকো খাবো বলে
এতো কষ্টে ভূতের দেশ থেকে আসা! "
হরির চোখে চোখ রাখি-
শূন্য কালো এক গহবরে
শ্মশানের চিতা জ্বলছে।
চিতার আগুনে পুড়তে থাকা লোকটা কে?
অমল বোস মনে হচ্ছে!
নিজেকে নিজের চিতায় দেখার সৌভাগ্য
পৃথিবীর আর কারও হয় না।
মালবিকা কি জানে আমার এ সৌভাগ্যের কথা?
থাক। বলে কাজ নেই।
মালবিকা বিশ্বাস করবে না।
ভাববে, সংসারের দায়িত্ব এড়ানোর জন্য
ভয় দেখাচ্ছি আমি।
কে শুনবে?
কে শুনবে আমার এ দুর্লভ সৌভাগ্যের কথা?
ঠাম্মা আমাকে খুব ভালোবাসতো।
একমাত্র সেই নির্দ্বিধায় আমাকে বিশ্বাস করতো।
ঠাম্মা, ঠাম্মা
শুনতে পাচ্ছো?
নাহঃ ঠাম্মাকে আকাশ থেকে ডাকা ঠিক নয়।
বেচারা দুঃখে হয়তো কেঁদেই ফেলবে।
কোমল মন আমার ঠাম্মার
তাই তো সে তাড়াতাড়ি চলে গেলো।
পৃথিবীতে আমার মতো অন্তঃসার শূণ্য
কর্ম ধর্মহীন পাপী যারা
তারাই কেবল আগাছার মতো বাঁচে।
অথচ ঠাম্মা?
থাক। ঠাম্মার কথা ভাবলে কান্না পায়।
সিগারেট আর ঠাম্মা ছাড়া
এ পৃথিবীতে
কেউ আমাকে ভালোবাসে নি।
তারা ছাড়া
কেউ দুঃখে আমার চোখ মুছিয়ে দেয় নি।
হটাৎ নারী কণ্ঠে চীৎকার-
"ঊহঃ কি কুক্ষণে এমন বদচরিত্র
নেশাখোর আমার ভাগ্যে জুটেছিলো! "
ধোঁয়ার কুণ্ডলীর ওপারে
অবিকল মালবিকার মতো দেখতে
নারী মূর্তিটি কে?
কে জানে!
হাতের সিগারেটে সময় পুড়ে।
দুঃখ পুড়ে না। যন্ত্রণা পুড়ে না।
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem