ক্ল্যাসিক্যাল ইসলামি খিলাফাত মানেই হানাফি-সূফিপন্থী মুসলিম খিলাফাত/ মাযহাব বিষয়কঃ
হানাফি মাযহাব নাকি একটা কুসংস্কারাচ্ছন্ন, পশ্চাৎপদ, মূর্খ মানুষদের বোধবুুদ্ধিহীনতার নিদর্শন? আলোকিত মানুষ নাকি ইমাম বা মাযহাব মানতে পারে না? তাদের জন্য নাকি ছাপার অক্ষরে কুরআন ও কয়েকটা হাদীসই যথেষ্ট?
কোনও বুদ্ধিমান মুসলিম নাকি হানাফি বা অন্য কোনও মাযহাবপন্থী হতে পারে না? অথচ খোদ কাবা শরীফে ১, ৪০০ বছরের মধ্যে ৯৫০ বছর নামাজ হয়েছে হানাফি পদ্ধতিতে। ওই সমস্ত নামাজি কি মুশরিক ছিলেন? ওই সমস্ত মক্কা মদীনা মিনা আরাফা মুজদালিফার মসজিদের ইমাম কি মুশরিক ছিলেন? ওই সমস্ত হাজী কি মুশরিক ছিলেন? ওই ৯৫০ বছর কি পৃথিবীতে ইসলাম ছিল না? কোন ইলম ছিল না, আলিম ছিল না, কিতাব ছিল না?
এখন যারা ‘ইমাম মানা' মানুষদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন বলে, তাদের বাপ-দাদার জাহাজে চেপে মক্কায় গিয়ে আরাফাতের খুতবার খতিব কাকে পেয়েছিল? মুশরিককে?
সূফি বিষয়ক/ অপরদিকে সূফিদের বলা হয় কূপমন্ডুক। তারা নিজেরা নিজেরা কয়েকজন একত্র হয়ে আজগুবী কাজ করে। মাজার, ওরশ, মিলাদ, ফাতেহা, যিকির। সূফিপন্থীদের প্রতি প্রধান অভিযোগ, তারা নাকি পুরো মুসলিম উম্মাহ্ নিয়ে কখনো ভাবে না। কখনো ভাবেনি। মুসলিম বিশ্বে নাকি সূফিদের কোনও অবস্থান নেই, অবদান নেই। কারণ, সূফিরা যে কুসংস্কারাচ্ছন্ন তা সূফিরাও জানে!
হায়! সালাহউদ্দিন আইউবি সুস্পষ্ট সূফি ছিলেন! সূফি ছিলেন বলেই ক্রুশকে মাটিতে পড়তে দেননি জেরুজালেম বিজয়ের পর। সূফি ছিলেন বলেই জেরুজালেমের প্রত্যেক খ্রিস্টিয় ও ইহুদীকে সেইফ প্যাসেজ দিয়েছেন। সালাহউদ্দিন আইউবী'র বাহিনীর অর্ধেকই ছিলেন ক্বাদিরিয়া তরিক্বার অনুসারী। তিনি সূফি ছিলেন বলেই প্রতিপক্ষের শিবিরে গিয়ে ক্রিস্টেনডোমের রাজার চিকিৎসাও করে এসেছেন।
সূফিরা যদি ইসলামের দায় নিয়ে না-ই থাকে, তুমি চাঁদু মুসলিম হলে কোত্থেকে? আফগান থেকে জাপান; ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ- পূর্ব গোলার্ধের প্রত্যেক নওমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছে কোন না কোন সূফির হাত ধরে।হায়, আকাশ থেকে এত উল্কাও ঝরেনি এই ১, ২০০ বছরে, যত সূফি এসেছে পূর্ব গোলার্ধে। চীন-মঙ্গোলিয়া-সিঙ্গাপুর এমনকি দক্ষিণ জাভার দুর্গম জঙ্গলেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সূফিদের মাজার। কৈ, কোন খারিজি তো ১, ২০০ বছরে পূর্ব গোলার্ধে থাকা একজন মানুষকেও মুসলিম করতে আসেনি- পারা বহুদূর। শিয়ারা ছিল ইরানের ভিতরেই।
ঢাকার মুসলিমরা, চেনেন নাকি শাহ আলী বোগদাদী, খাজা শরফুদ্দিন চিশতীকে? চেনেন না তো? মাও সে তুং কে চেনেন? রজার ফেদেরারকে? সিলেটের মুসলিমরা তাও শাহজালালের নাম শুনেছে কিন্তু রাজশাহীর কয়জন আবদুল কুদ্দুস সাহেবের নাম জানে?
আকাশ থেকে এত উল্কাও বর্ষণ হয়নি, যত সূফি এসেছেন বাংলায়। এরপর বাংলার মুসলিমরা হঠাৎ মডার্ন হয়ে গেল। সূফিত্ব তাদের কাছে কুসংস্কার হয়ে গেল। সূফিত্ব তাদের কাছে ‘ ইসলামে কোন অবদান না রাখা কূপমন্ডুকদের কাজ কারবার' হয়ে গেল।
মক্কা ও মদীনায় এক হাজার বছরেরও বেশি সময় যাবৎ কোনও আলিমের কথা গ্রহণযোগ্যতাই পেতো না, যদি সেই আলিম একই সাথে সূফি না হতেন!
ইসলামের পবিত্রভূমিতে কোনও উল্লেখযোগ্য মসজিদের ইমাম হতে হলে, খতিব হতে হলে, মাদ্রাসার বিশেষ মুদাররিস হতে হলে তাঁকে আগে সূফি হতে হতো।
ইসলামের খিলাফাতের প্রধান প্রধান আলিমের পদে যেতে হলে (যেমন শাইখুল ইসলাম)আগে তাঁকে সূফি হতে হতো।
সূফিত্ব ছাড়া আলিমরা প্রফেসরের সমান মর্যাদায় যেতেন না। কারণ, যে ব্যক্তির অন্তরের চোখ খোলেনি, যে ব্যক্তির স্রষ্টা ও সৃষ্টিজগতের সাথে অন্তর্নিহিত সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি, যার তাহারাত অর্জিত হয়নি তাকে বইয়ের বিশ্লেষক হিসাবে আলিম বলা যেতে পারে কিন্তু উপলব্ধিকারক হিসাবে কোনও অবস্থানে দেয়া কখনোই যেতে পারে না।
মুসলিম জাহান সূফিদের হাত দিয়েই পরিচালিত হয়েছে। যুগে যুগে শত শত মুসলিম শাসক ছিলেন সূফি। ফক্বীহ্ হওয়ার পূর্বশর্ত ছিল সূফি হওয়া। সমরনায়ক হিসাবে কেউ জাস্টিফাইড কাজ করবে তা বোঝার উপায় ছিল যদি সে সূফি হয় তবেই। ইসলাম, সূফিদের দ্বারাই বিকশিত হয়েছে।
তারপর, বর্গী এলো পৃথিবীতে।/ তারপর, দুধমাখা ভাত কাকে খায়। দুধমাখা ভাত কাকে এখন খায়, খাক। কিন্তু কেউ যেন ভুলেও দুধমাখা ভাতকে কাকের খাদ্য মনে না করে। ভুলেও যেন কেউ মনে না করে যে কাকের জন্য ভাতের সাথে দুধ মেখেছিলেন খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী।
((help from Golam Dastagir Lisani))
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem