কার্গিল যুদ্ধের পটভূমিতে অরুণ মাজীর উপন্যাস
কাশ্মীর, তার জন্ম থেকেই এক বধ্যভূমি। কাশ্মীর ভূস্বর্গ। তবুও কিন্তু পৃথিবী তাকে চেনে, যুদ্ধভূমি হিসেবে। ভূস্বর্গ হিসেবে নয়।
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, অথচ নিরীহ মানুষের প্রাণ যায়। ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে যাওয়ার আগে, বিষবৃক্ষের চারা রোপন করে গেছে। ঘৃণা আর ধর্ম বিদ্বেষের সেই চারা, আজ মহীরুহ। আজ তা আরও বেশী সতেজ প্রসারিত। সেই বিষবৃক্ষের দংশনে, ভারত বাংলাদেশ আর পাকিস্তান, আজও বেশ রক্তাক্ত।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হলো। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারালো। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের সর্বস্ব হারালো। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, সেই একই ঘটনা ঘটলো। সেই একই রকম নৃশংসতা।
মানুষের চেতনা হবে কবে? মানুষ কেন বোঝে না, দেশে দেশে এই যে শত্রুতা, তার পুরোটাই কিছু দুষ্ট মানুষের ষড়যন্ত্র? আর আমার মতো সাধারণ মানুষরা, সেই দাবা ক্রীড়ার বোড়ে?
অথচ আমার মত সবারই, একটা করে মহিয়সী মা আছে। যে মা হয়তো, তার বৈধব্যের জ্বালা বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছে। কেন? মায়ের স্বপ্ন, তার শিশুরূপ স্বপ্নবৃক্ষ, একদিন মহীরুহ হবে। আর সেই বেড়ে ওঠা স্বপ্নবৃক্ষ, একদিন তাকে আশ্রয় দেবে। ছায়া দেবে। শীতল হাওয়া দেবে। ফুল দেবে। ফল দেবে।
দুষ্টের বিষবৃক্ষ বনাম মহতের স্বপ্নবৃক্ষ। এই হলো সৃষ্টির দুটো মেরু। একদিকে রাজার সিংহাসন দখলের ইচ্ছে, আর অন্যদিকে অমল বোসের সাদা শাড়ি পরা, বিধবা মায়ের বুকে রক্তক্ষরণ।
তো জীবনে, ন্যায় কোথায়? সবই তো অন্যায়। অন্যায় যারা করে, পৃথিবী কেবল তাদের জন্য। মিছিল তাদের জন্য। জনসভা তাদের জন্য। আইন তাদের জন্য। বিচার ব্যবস্থা তাদের জন্য। মিডিয়া তাদের জন্য। এক দেশ মানুষ তাদের জন্য।
ন্যায় শুধু স্বপ্নে। সাধারণ মানুষের স্বপ্নে। কারণ, ক্ষমতাশালীর প্রত্যেকটা কর্ম, অন্যায়। তাদের প্রত্যেকটা কর্ম মানুষ বিরোধী।
তবুও অমল বোসের মা, সেই ন্যায়ের জন্য না খেয়ে শুকিয়ে মরবে। করণ সিং বা অমল বোসদের মতো সৈনিকরা, তা শুধু অসহায় ভাবে দেখতে থাকবে।
কখনো সুবেদার মেজর করণ সিং, ট্রেনের কামড়ায়, অর্দ্ধ পরিচিত এক ক্যাপ্টেনের কাছে হতাশায় আর্তনাদ করবে। আর কখনো ক্যাপ্টেন অমল বোস, রাতের আঁধারে, তার জল ভরা চোখ, বালিশের আড়ালে ঢাকবে। তো ন্যায় কোথায় হে মানুষ? ন্যায় কোথায়?
তবুও মানুষ বাঁচতে চায়। তবুও মানুষ- যন্ত্রণা বুকে, হাসতে চায়। খেলতে চায়। রঙিন রঙিন স্বপ্ন আঁকতে চায়।
পৃথিবীতে এতো অন্যায় অত্যাচার সত্বেও, কিছু মানুষ আজও ন্যায়ের পথে হাঁটতে চায়। কিছু মানুষ, দারিদ্র্য আর বৈধব্যের, অজস্র যন্ত্রণা বুকে নিয়েও, তাদের সন্তানকে শিক্ষিত ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি গড়তে চায়। ন্যায়ের পথ অলীক কঠিন হলেও, তারা সেই ন্যায়ের পথে হাঁটতে চায়।
তৃষ্ণার প্রেমিক সাধারণ মানুষ হলেও, সেও কিন্তু ন্যায়ের পথে হাঁটতে চায়। চাইবো না কেন? গরীব অসহায় বলে কি, মহত্ব থাকতে নেই? দুর্বল মানুষ বলে কি, দেবত্বের স্বপ্ন দেখতে নেই? আলবৎ দেখবো, হাজারবার দেখবো। আমার বুক গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেও, মহত্বের স্বপ্ন দেখবো। দেবতা তো, কোন দিন মানুষকে বুকে তুলে, তার ক্ষতে হাত বুলিয়ে দেবে না। আমি দেবো। হাজারবার দেবো। হে পৃথিবী, তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি- অমল বোস তার কর্ম ক্ষেত্রে গুলির শব্দে কোনদিন ভয় পাবে না। অমল বোস, আর্তনাদ শুনে, কোনদিন পিছিয়ে যাবে না।
হে মা, আমি তোমার রক্তে তৈরী। আমি কি অন্যায় করতে পারি? আমি কি কর্ম থেকে পালিয়ে যেতে পারি?
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem