আপনি যে-ই হোন, যত জ্ঞানী-গুণী-বোধসম্পণ্ণ এবং সত্যপন্থীই হোন, ইসলামের পথে আপনি একা নন এবং কুরআন সুন্নাহ্ আপনার একা নিজে নিজে বোঝার কোন অবকাশ নেই। আপনার জন্য আদেশদাতা থাকা বাধ্যতামূলক, এবং আদেশদাতার অধীনে আপনার থাকা বাধ্যতামূলক।
আমরা সাহাবীদের চেয়ে যোগ্য নই, এবং তাঁরা যেখানে উলিল আমরের অধীনতা সব সময় নিয়েছেন, আমাদের কোন অবকাশই নেই এড়ানোর। প্রত্যেকে তার তার উলিল আমর কীভাবে বেছে নেয়? আমরা দেখেছি কীভাবে বেছে নেয়, রাসূল দ. যখন সাহাবাদের উলিল আমর রূপে বাহ্যিক পৃথিবীতে সবাইকে সৌভাগ্যমন্ডিত করছিলেন, তখন তিনি উলিল আমর। কীভাবে? বায়াতের মাধ্যমে। তাঁর প্রতিটা নিরদেশ পালনের আনুগত্যের বায়াতের মাধ্যমে। তারপর সাহাবারা রা. কী করলেন? উলিল আমর হিসাবে পেলেন সিদ্দিকে আকবার রা. কে এবং তার বায়াত গ্রহণ করলেন। তাঁরা বলেননি, আমরা উলিল আমর হিসাবে রাসূল দ.'র মত শ্রেষ্ঠরও শ্রেষ্ঠকে পেয়েছি সুতরাং আমাদের উলিল আমরের প্রয়োজন আর নেই। এরপর তাঁরা বলেননি, আমরা রাসূল দ. ও সিদ্দিকে আকবর রা. কে পেয়েছি, আর উলিল আমরের দরকার নেই। তাঁরা উমার রা. ও উসমান রা.'র বায়াত গ্রহণ করলেন পরপর।
এরপর উলিল আমর হিসাবে প্রকাশিত হলেন মাওলা আলী রা.। সাহাবা ও তাবিয়িরা মাওলা আলী রা.'র আনুগত্যের বায়াতও গ্রহণ করলেন। সাহাবা ও তাবিয়িরা বলেননি, আমরা মাওলা আলী রা. ও তার পূব্বসূরীদের বায়াত গ্রহণ করেছি সুতরাং আর বায়াতের প্রয়োজন নেই। আমাদের যোগ্যতম তো তাঁরা ছিলেন। বরং তাঁরা ইমাম হাসান রা.'র বায়াত গ্রহণ করলেন।
এরপর ইমাম হুসাইন রা. যখন রাজাও হলেন না, সম্রাটও হলেন না, তাঁরা বলেননি, রাজত্ব নেই বায়াত কেন? তাঁরা বলেছেন, চাই না মাগো রাজা হতে। তাঁদের অনেকে মাওলা হুসাইন রা.'র বায়াত গ্রহণ করলেন। অনেকে বায়াতের জন্য অপেক্ষা করলেন। অনেকে বায়াত হননি, কিন্তু অপেক্ষা করে তারপর মদীনায় এবং আরবজুড়ে শহীদ হলেন।
তারপর কি বায়াতের ধারা বন্ধ হয়ে গেল?
তোমাদের মধ্যে বর্তমান- কে অনুসরণ করা বন্ধ হয়ে গেল? না, রাজা হননি যাইনুল আবিদিন রা., কিন্তু তার হাতে বায়াত হয়ে তার মাধ্যমে ধর্মকে উপলব্ধি ও অনুসরণের পথ খোলা রইল। মানুষ তারপরও বায়াত হলো ইমাম মুহাম্মাদ আল বাকির রা.'র হাতে।
তারপর বায়াত হলো জাফর আস সাদিক, মূসা আল কাযিম রা.'র হাতে। তাহলে ওই আয়াত, যদি মতভেদ হয় তবে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল দ.'র কাছে ফিরে যাও?
হ্যা, মতভেদ হয়নি? হয়েছে। এজিদের হাতে বায়াত ভুল বায়াত। এজিদের হাতে বা এজিদের মত নাফরমানদের হাতে বায়াত হবার বদলে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল দ.'র কাছে ফিরে যাওয়া অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ্ থেকে বোঝার চেষ্টা করতে বলা হয়েছে যে, আসলে এই লোক কি উলিল আমর হিসাবে যোগ্য?
বায়াত এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, ১, ৪০০ বছর ধরে শত শত সহস্র সহস্র ধারায় আজো বায়াতের পথ খোলা আছে। অবিচ্ছিন্ন ধারা। আল্লাহ্'র অবিচ্ছিন্ন রজ্জু। যুগে যুগে, প্রতি জেনারেশনে এই ধারাতে মহতী কেউ না কেউ ছিলেন।
আমরা আতিউল্লাহ্ কে মেনে নিয়েছি। আতিউর রাসূলা দ. কে মেনে নিয়েছি। কিন্তু উলিল আমরি মিনকুমকে মেনে নিইনি। কেন সাহাবা রা. গণ উলিল আমর এর হাতে বায়াত হবার জন্য অস্থির ছিলেন, কেন রাজ্যহীন উলিল আমরদের হাতে যুগে যুগে মানুষ বায়াত হয়েছে? কারণ ধর্মনিরদেশের কেউ যদি না থাকে, আমরা কুরআন বুঝতে গিয়ে ভুল করতেই পারি, হাদীস বুঝতে গিয়ে ভুল করতেই পারি, চার/পাঁচ খলিফা বা আহলে বাইত বুঝতে গিয়ে ভুল করতেই পারি। কিন্তু যদি ঐশী নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুগে যুগে সব যুগে উপস্থিত উলিল আমরদের মধ্যে কারো অধীনতা গ্রহণ করি, তবে তাঁর ব্যাখ্যা থেকে, আমার ভুলকে ধরিয়ে দেয়া বা আমাকে অধিকতর শুদ্ধ আমল আখলাক আক্বিদার দিকে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ।
এইজন্য বলা হয়, তাসাউউফ কোনও গোপন জিনিস নয়, বরং সূফিতত্ত্ব একটা আবশ্যক উপাদান- এমনকি দৈনন্দীন আমল আখলাক এবং ঈমান আক্বিদা রক্ষার জন্যও।
(collected))
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem