অভিমান তারই বেশি হয়, যে ভালোবাসে বেশি।
তোমরা অনেকে, এ কথার সাথে একাত্ম হবে না। তবুও আমি কিন্তু তাই বিশ্বাস করি। সেই বিশ্বাস থেকেই, অনেক সময় আমি বাঙালির উদ্দেশ্যে অনেক রূঢ় কথা বলি। সেই কঠিন কথার উদ্দেশ্য, কাউকে সমালোচনা বা অপমান করা নয়। আমার সেই কঠিন কথার উদ্দেশ্য, মানুষের চিন্তা ভাবনায় দীর্ঘদিন ধরে যে শ্যাওলা জমে আছে, সেই শ্যাওলাকে পুড়িয়ে দেওয়া। আমি যদি সে কথা বলপূর্বক না বলি, সে কথা মানুষের মনে দাগ কাটবে না। তাই আমাকে অনেক সময় রূঢ় কথা বলতে হয়।
বাংলার এই অবক্ষয় দেখে- অনেকের কোন হেলদোল না হলেও, আমার বুকে বড় যন্ত্রণা হয়। বাংলার উচ্চতা আমি আকাশে দেখি। "বাঙালি" শব্দটা মনে এলেই- আমার স্বামীজিকে মনে পড়ে, নেতাজিকে মনে পড়ে, রবি ঠাকুরকে মনে পড়ে, নজরুলকে মনে পড়ে, বিদ্যাসাগরকে মনে পড়ে, রামমোহন রায়কে মনে পড়ে। আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে দেখার পর, বাংলার এই নির্লজ্জ্য অবনমন, আমি অন্তত মেনে নিতে পারি না। রাতদিন আমার বুকে যন্ত্রণা হয়। আমার সংকল্প- আমার জীবিতকালে আমি বাঙালিকে জগৎ শ্রেষ্ঠ দেখতে চাই। সে জন্য, আমাকে যতদূর হাঁটতে হবে, তা আমি হাঁটবো।
আমি কর্ম্মে বিশ্বাসী। আমি বীরত্বে বিশ্বাসী। তোমরা জানো- একথা আমি বারবার বলি। আমি প্রতিভায় বিশ্বাস করি না, আমি বুদ্ধি বা বিদ্যায়বিশ্বাস করি না। আমার বিশ্বাস- মানুষের বুকে সাহস না থাকলে, তার যত বিদ্যা বুদ্ধি বা প্রতিভা থাকুক না কেন; তা সবই বৃথা।
দীর্ঘদিন ধরে আমি সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত। পৃথিবীর বহু কুখ্যাত যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিক আমি। মৃত্যুর সাথে অনেক কথা হয়েছে আমার, অনেক চোখাচোখি হয়েছে আমার। মৃত্যু আমাকে একটা কথা বারবার বলে- "মনে রাখিস অরুণ মাজী, বীরপুরুষকে আমিও শ্রদ্ধা করি। "
বীরপুরুষকে সবাই শ্রদ্ধা করে- জীবন করে, মৃত্যু করে, মানুষ করে, ইতিহাস করে, ঈশ্বর করে। বীরত্বের চেয়ে কোন গুণই আর বড় হতে পারে না।
বীরত্ব কখনো ফুল শয্যায় ঘটে না। বীরত্ব জাগাতে হলে- মানুষের বুকে ছুরি হানতে হয়, পশ্চাৎদেশে পদাঘাত করেত হয়, মস্তিষ্কে কাঁকড়া বিছে ছাড়তে হয়। তবে মানুষের দেহে আর মনে বীরত্ব জাগে।
আমি সৈনিক। মৃত্যুকে আমি বগলে নিয়ে ঘুড়ি। তাই কারও পা চাঁটা আমার কর্ম্ম নয়। নিজের স্বার্থ দেখা আমার কর্ম্ম নয়। আমার এখনই যা আছে, তা আমার প্রয়োজনের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। পার্থিব জগতের কোন কিছুই আমাকে প্রলুব্ধ করতে পারে না। মালবিকার হাসি আমাকে প্রলুব্ধ করলেও, তার উঁচু বুক আমাকে প্রলুব্ধ করতে পারে না। আমি গৃহী হয়েও, সন্ন্যাসীর মতো জীবন যাপন করি।
তাই কাউকে তেল মেরে কথা বলা আমার কর্ম্ম নয়। আমি যদি ভাবি- মানুষকে খিস্তি করলে মানুষের উপকার হবে, তাহলে মানুষকে কাঁচা কাঁচা খিস্তি করতেও আমি পিছ পা হবো না। এবং তা আমি লুকিয়ে লুকিয়ে করবো না। তোমাদের সামনে প্রকাশ্যেই তা করবো। আমি সমাজের কোন সংস্কার বা ব্যাকরণ মানি না।
আমার কাছে একটাই ব্যাকরণ। তা হলো- মানুষের মঙ্গল। যে নিয়মে মানুষের মঙ্গল, তাই আমার নিয়ম। আমি কোন নির্দিষ্ট ব্যাকরণ অনুসরণ করি না। আমি না কমিউনিস্ট, না ক্যাপিটালিস্ট, না ন্যাশনালিস্ট, না সোস্যালিস্ট। আমি নিজেকে তাই THOUGHT ANARCHIST বলি। এই শব্দযুগলও আমার নিজের তৈরী।
আমার কাছে মানুষই শেষ কথা। আমাকে যারা ষড়যন্ত্র করে দাবিয়ে দিতে চায়, তারা জানে না- তারা প্রতিদিন আমাকে আরও আরও বেশি ক্ষমতাশালী করছে। তাই তাদেরকে আমার অন্তরের প্রণাম।
বাংলাকে আমি বিশ্ব শ্রেষ্ঠ দেখবোই। এ আমার অঙ্গীকার।
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem