ঠাম্মা
তার পান খাওয়া গালে
আমায় চুমু দিয়ে বলতো-
'দুধটা খেয়ে না অমল
তুই বড় হলে-
আমরা চাঁদ মামার বাড়ি যাবো।
সেখানে থোকা থোকা আঙুর
বাতাবি লেবু, বুনো হাঁস
মুরগীর ডিম;
সব কিছু তাজা তাজা! '
বড় হওয়ার আগেই
ঠাম্মাটা কোথায় যেন চলে গেলো।
নাঃ
চাঁদ মামার বাড়ি আর যাই নি।
বড় হয়ে জানলাম-
মানুষ শিশু থেকে কিশোর হলেই,
চাঁদ মামা আত্মহত্যা করে।
চাঁদ মামা
নিষ্পাপ শিশু ভালোবাসে,
এঁচোড়ে পাকা কিশোর নয়!
কিশোর বয়সে
রামায়ণ পড়তে পড়তে
রাম রাজ্যের কথা শুনেছি।
সেখানে নাকি
সবাই সুখী, সৎ, আর বিনয়ী।
আর রাজা তাদের
এতোটাই প্রজাবৎসল যে
আপন স্ত্রীকেও সে, আগুনে ঝাঁপ দিতে বলে!
বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্টের জন্য
আমার স্কলারশিপ পাওয়ার কথা।
তিন বছরে, তিনটে চটি ছিঁড়েও
স্কলারশিপের টাকা উদ্ধার করতে পারি নি।
'বিকাশ ভবন' খুব বড় জায়গা
ময়লা মাখা ছেলের দিকে
কেউ ফিরে তাকাতেই চায় না।
যখন টাকা পেলাম
তখন আমি একরাশ ঋণে ডুবে।
আগের বছর
বাবার 'হার্ট এটাক' হলে
ওষুধ কিনতে,
পাঁচ হাজার টাকা ধার করে রেখেছি।
টাকা হাতে
ছেঁড়া চটিটার দিকে তাকিয়ে
চোখ বুজেছি আমি।
ধার শোধ করার পর
ছেঁড়া চটি আর বদলাতে পারি নি।
নাঃ মানুষ বড় হলে
রাজা রামেরও মৃত্যু হয়।
বড় হলে
স্বপ্নের মৃত্যু হয়
চাঁদ মামার মৃত্যুর
সুখের মৃত্যু হয়
প্রেমের মৃত্যু হয়
জীবনের মৃত্যু হয়।
তবুও বেঁচে আছি
তবুও লড়াই বুকে বেঁচে আছি।
তবুও সিংহের স্পর্ধা নিয়ে বেঁচে আছি।
তবুও দাতা কর্ণের হৃদয় নিয়ে বেঁচে আছি।
কর্পদকশূন্য, উলঙ্গ আমি;
তবুও রাজার মতো বেঁচে আছি।
আমি দিই
কিন্তু ভিক্ষা আমি করি না।
ঈশ্বর পুত্র আমি,
কেন ভিক্ষা করবো?
ভিক্ষা যদি করতে হয়
অসীম শক্তির
ঈশ্বরের কাছে ভিক্ষা করবো।
মাথা যদি ঝুঁকাতে হয়
সর্ব শক্তিশালী
ঈশ্বরের কাছে মাথা ঝুঁকাবো।
ইঁদুর ছুঁচো টিকটিকির কাছে কেন?
কাঁদি,
তবে দুঃখে নয়।
দুর্ভাগ্যকে
বারবার পরাস্ত করার স্পর্ধার জন্য।
এ উলঙ্গ ভিক্ষা কখনো করে না গো
এ উলঙ্গ ভিক্ষা কখনো করে না।
মরবো,
তবে সিংহের গর্জন বুকে মরবো।
ইঁদুর ছুঁচো টিকটিকির মতো
চিঁ চিঁ করে নয়।
© অরুণ মাজী
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem
I pray to God your inspiration acts on me like electricity. Ur inspiration alives me.