একটি খারপ ছেলে আর একটি খারাপ পাখি Poem by Madhabi Banerjee

একটি খারপ ছেলে আর একটি খারাপ পাখি

একটি খারাপ ছেলে এবং একটি পাখি বাগানে চুপ করে বসে আছে। দু'জনের মনটা খুব খারাপ আজ।
পাখিটি বলল-কি গো চুপ ক'রে বসে আছ কেন? মন খারাপ নাকি?
ছেলেটি জবাব দিল-আর কি বলব বলো -সবাই বলে আএকটি খারাপ ছেলে এবং একটি খারাপ পাখি
মি নাকি খুব খারাপ ছেলে, ভাল রেজাল্ট করে বিদেশে
যাইনি তো তাই -মা-বাবা, আত্মীয়, পরিজন, পাড়া-প্রতিবশী সবাই বলে আমি নাকি খুব খারাপ, তাই সব ভালববাসা
ভালবাসা ভাল ছেলেটাকেই দিচ্ছে, দেখলে গা জ্বলে যায়।থাকে তো দেশের বাইরে, সমাজ সংসারে তো কোনো
তো দায়-দায়িত্ব পালন করতে হয় না, ছুটিতে এসেছে -আদরের বহর দেখ-দূরছাই ভাল্লাগে না আর! তা তুমি
কেন মন খারাপ করে বসে আছ? কা..কা..করছ না।
আর বলো কেন ভাই-আমিও নাকি খুব খারাপ পাখি, এখন বসন্তকাল-ঐ উনি বিদেশ না কোন চুলো থেকে এসেছেন,
সারা বছর তো দেখা যায় না, তাই যদি এখন একবার কুহ কুহু রবে ডেকছেন তো সবাই একেবারে আনন্দে গদোগদো ভাবখানা দেখ, কেউ রেডিওর গান শোনা বন্ধ করল, কেউ টিভিতে সিরিয়াল দেখা বন্ধ করল কেউ বা বই পড়া, কেউ আবার আনন্দে সুরে সুর মিলিয়ে ডাকতে লেগেছে। একেবারে আদিখ্যেতার বহর দেখ।।আরে বাবা সারা বছর জলে ঝড়ে রৌদ্রেতাপে সুখে দুঃখে আমিই তো সাথে থাকি।তুমি তো জান আমায় যারা খারাপ বলে, তারা যখন রাস্তার ওপর ওয়াক থু করে নাক ঝাড়ে, নোংরা ভরা পলিথিনের প্যাকেটা রাস্তায় ফেলে রাস্তাটা নোংরা করে, সেগুলো তো আমিই ঠোঁটে করে নিয়ে পরিস্কার করি।অথচ কাছে গেলে একটু আদর করা দুরে থাক দেখা মা্ত্রই ‘হুস হুস'।। অনুষ্ঠানে প্যান্ডেল করবে আমার বাসাটা কভার করে, যেন আমি এটু উঁকি মারতেও না পারি।আর যার গান শুনে যতই দেখা পাবার আশায় উঁকিঝুঁকি মার তার দেখা পাবে না, বেরিয়েছে কোনোদিন সামনে, দেখা- দিয়েছে কোনদিন-দেখা দেবে না-দেবে না-চিরকাল পাতার আড়ালেই থেকে যাবে।তোমাদের ভালবাসার কোনো মূল্যই দেবে না।ওর নাম কোকিল না রেখে কুটিল রাখলে ভাল হতো।
আর আমাদের স্বজাতি প্রীতি তো সর্বজনবিদিত, আমাদের পাখিজাতির কিছু হলে তো আমরা একসাথে ঝাপিয়ে পড়ি।

ছেলেটি বলল-তবে শোনো বলি আমার কথা, আমি নাকি একটি অকর্মার ঢেঁকি।কোনো কাজই নাকি করি না।অথচ নিজের বাড়িতে এমন কি প্রতিবেশীর বাড়ীতে অতিথি এলে-ঐ ভাল ছেলে মিষ্টি এনেছে কোনোদিন? তখন ‘যা সোনা মিষ্টি এনে দেনা, লক্ষী ছেলে'।তারপর পাড়ার কোনো ঠাকুমা-দাদু মারা গেলে' ‘চল বাবা কাঁধে তোল'।কাঁধে তুলবে ঐ মাখনপানা ভাল ছেলে? অথচ ঐ বুড়ি আমাকে বলেছে নচ্ছার একটা আর ভালকে আশির্বাদ করেছে বড় হও ভাল হও'। আরও কত কাজ করি -পাড়ায় কাকে হাসপাতালেত ভর্তি করা হবে, কাকে রক্ত দিতে হবে, ডাক্তারকে ধমক দিয়ে বেডের ব্যবস্থা করতে হবে, রাতের বেলায় RG পার্টিতে থাকতে হবে পাড়ায় ডাকাত ঠেকাতে।এসব কাজের সময় ডাক পড়ে এ শর্মার।ভালছেলে তখন হয় বিদেশে নয়ত পড়ার টেবিলে চিকের আড়ালে। ফাঁকিবাজ একটা । যা একটু আধটু সমাজসেবা কর তা না ….এই তো সেদিন clean the city প্রোগ্রামে নিজের শহর নিজেই পরিস্কার করলাম ।এসছে কোনো ভালছেলে? ঝ্যটাঁ নিয়ে? ওদের শুধু পড়া আর ডিগ্রী চাই, কি হবে ডিগ্রী নিয়ে সে ডিগ্রী যদি না স্বদেশের কাজে লাগে। ভালছেলে কেবল নিতে জানে দিতে জানে না কিছু।যে দিদা তোকে সন্তান স্নেহে লালন-পালন করেছে, তোর অসুখ হলে রাত জেগেছে।সারাটা দিনের সঙ্গী হয়েছে, তার দিকে একটু তাকিয়ে দেখ, তা না দেখা হলে ভ্রু কুঁচকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। মা-বাবা তো ‘হাই বলে চুমু খেয়ে যে যার কাজে চলে গেছে।

পাখি বলে উঠল-ঠিক বলেছ ঠিক বলেছ, আমারও সেই কপাল, কোন কলতলার বাটি, কোন কূয়োঁতলার চামচ, কোন উঠোনের একটু তার, কোন বাগানের আমগাছের শুকনো ডাল দিয়ে এই ঘর বাঁধা আমার। সেই ঘরে গুনধর যে একটা ঘর বানাতেও পারে না- সে ডিম পেড়ে যায়। সেই ডিমে তা দেই।সেই ডিম ফুটে বাচ্চা হয় । সন্তান স্নেহে তাদের লালন-পালন করি আমার ছেলেদের সাথে।ওদের জন্য কত অন্যায় করি-যেমন বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের হাতের থেকে লজেন্স বিস্কুট ছোঁ মেরে নিয়ে এসে, সমানভাগে ভাগ করে খাওয়াই-বড় করে তুলি-সে কথা কি একবারও মনে রাখে গুনধর-রাখে না । যেই না ডান শক্ত হ'লো-মুখে ফুটল বুলি অমনি দিল ছুট।আর কোনো খবর নেই সারা বছরভর।
একটুও কৃতজ্ঞতা নেই গো! অথচ দেখ এই অকৃতজ্ঞদের কত সন্মান এ সমাজে-উপরটা দেখে সকলে, অবশ্য দেখতে যদি পেত একবার -তবে জানত কি রূপ, কেমন মিস কালো বাববা! আর কি বদনাম আমার, আমি নাকি ভূতে ভয় পাই, তাই মাটির হাড়িতে ভূতেরর মুখ এঁকে ছেড়াজামা আর খড়কুটো দিয়ে ভূত বানিয়ে শস্যক্ষেতে পুঁতে রাখে। নাম রেখেছে কাকতাড়ুয়া, কি অপমান বলো, যেন কাকই শস্য খায় আর কোনো পাখি শস্য খায় না।। ওরা তো জানেনা আমি ভূতকে থোড়াই কেয়ার করি, আমি ঐভূতের গা থেকে খড় লাঠি ছেড়া ন্যাকড়া ঠোঁটে করে নিয়ে আসি তারপর বাসা বানাই আর সে বাসাতে ওদের ভাল ডিম পারে।তো মিথ্যে বলব না-কেউ কেউ অবশ্য আমাদের গুনের কদর করেছে।কাকচরিত' তো সর্বজন বিদিত।আর ঐ হিচকক তো আমাদের সেলুলয়েডের মাধ্যমে প্রচার করে আমাদের স্টার তৈরী করেছেন।

ছেলেটি বলল-আমি একটু খেলাধূলা করি এটাও আমার দোষ।আরে বাবা শরীরটাকে তো সুস্থ রাখখতে হবে। তারজন্য খেলাধূলা জরুরী ।ভালর মতো আমাকে অত ডাক্তার খানায় যেতে হয় না। ওনার তো আজ সর্দি কাল পেটখারাপ লেগেই আছে। কি আর করব আমার কপালটাই খারাপ!

পাখি- এই কপাল কপাল কোরো না তো। আসল কথা কি জান -ঐ স্বার্থপর লোকগুলো কেবল নিজেদের কথাই ভাবে।অন্যদের কথা ভাবে না অন্যকে ভালবাসতে জানেনা। যদি সত্যি সত্যিই ভালবাসতে জানত তবে ওরা তোমাকে আমাকে ভালো দেখত। আমাদের গুনগুলো ওদের চোখে পড়ত-দোষেগুনে একটি জীবন হয়। একটু ভালবাসা, একটু সন্মান পেলে আমরাও আমাদের দোষগুলো সংশোধন করে নিতে পারতাম।

ছেলেটা বলল-এস আমরা একসাথে প্রচার করি, আমাদের কথা বলি, কোরাস গাই
‘আমরা ভালবাসা চাই-
আমরা একটি ভালবাসার পৃথিবী চাই'

Sunday, April 10, 2016
Topic(s) of this poem: descriptive
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Madhabi Banerjee

Madhabi Banerjee

allahabad
Close
Error Success