●
.
আমার এক বান্ধবী আছে এখনও যে স্বর্গে বিশ্বাস করে।
নির্বোধ নয়, তথাপি সর্বজ্ঞানত, আক্ষরিক অর্থেই কথা বলে ঈশ্বরের সাথে।
মনে করে কেউ একজন স্বর্গে বসে ওর কথা শুনছে।
মর্ত্যলোকে অসাধারণ কর্মদক্ষ সে।
সাহসীও, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম।
আমরা দেখলাম আবর্জনার মধ্যে একটা শুঁয়োপোকা মুমূর্ষু, লোভি পিঁপড়েরা তার উপর পিলপিল করছে।
আমি সর্বদাই দুর্যোগে বিহ্বল, প্রাণশক্তির বিরোধিতায় আগ্রহী সবসময়
কিন্তু ভীরুও, চকিতে চোখ বুঁজে ফেলি।
অথচ আমার বান্ধবী পর্যবেক্ষণ-সক্ষম, ব্যাপারগুলোকে প্রকৃতির নিয়মে খেলিয়ে নিতে পারঙ্গম। আমার জন্যই সে হস্তক্ষেপ করলো
বিধ্বস্ত পোকাটার উপর থেকে কিছু পিঁপড়ে ঝেড়ে নিলো, আর ওদেরকে
নিচের রাস্তায় ছেড়ে দিলো।
বান্ধবী বলে ঈশ্বরের উদ্দেশে আমি চোখ বন্ধ করি, সেটা অন্যকিছু নয় বাস্তবতার প্রতি আমার বিদ্বেষকে ব্যাখ্যা করে। সে বলে আমি সেই শিশুর মতো
যে বালিশে নিজের মাথা গুঁজে দেয়
যেন দেখতে না হয়, সেই শিশু যেনিজেই নিজেকে বলে
যে আলো বিষাদের কারণ ঘটায়—
আমার বান্ধবী এক মাতৃরূপ। ধৈর্যশীল, এক সাহসী মানুষ
নিজের সমবয়সি আমাকে ঘুম থেকে জেগে উঠতে পীড়াপিড়ি করছে—
আমার স্বপ্নগুলোর মধ্যে বান্ধবী আমাকে ভৎর্সনা করছে, একই রাস্তা ধরে
হাঁটছি আমরা, প্রত্যাশা করছি এখন শীতকাল;
ও আমাকে বলছে যে তুমি যখন বিশ্বজগতকে ভালোবাসবে স্বর্গীয় সংগীত শুনতে পাবে:
খোঁজো উর্ধলোকে, সে বলছে। যখন সচেষ্ট হচ্ছি, কিচ্ছু না।
শুধু মেঘমালা, তুষার, গাছপালার ভিতর একধরণের সফেদ কর্মযজ্ঞ
যেন নববধুরা লাফিয়ে উঠছে বহু উচ্চতায়—
তখন ওর জন্য আমি সন্ত্রস্তবোধ করি; মর্ত্যলোকের উপর
উদ্দেশ্যমূলকে ছুঁড়ে দেয়া একটা জালের ভিতর ধরা পড়তে দেখি তাকে।
বাস্তবে, সড়কটার পাশে বসে আছি আমরা, সূর্যাস্ত দেখছি;
মাঝেমধ্যে, একটা পাখির ডাকে ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে নীরবতাটুকু।
এটাই সেই মুহূর্ত আমরা ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করছি, সেই সত্যকে
যে আমরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি মৃত্যুর সাথে, নির্জনতার সাথে।
বান্ধবী ধুলার মধ্যে একটা বৃত্ত আঁকছে, কেন্দ্রে, সেই শুঁয়োপোকা নিষ্পন্দ।
সে সর্বদাই একটা সমগ্রতা নির্মাণের চেষ্টা করছে, সুন্দর কিছু, তার জীবনের থেকে পৃথক কোনও পারঙ্গম জীবনের চিত্র।
খুব চুপচাপ আমরা। এখানে বসে শান্তি লাগছে, কথাবার্তা নাই, স্থিরতায় রচিত মুহূর্তটি, হঠাৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠছে সড়কটা, হাওয়া
শীতল হচ্ছে, এখানে ওখানে চকমক করছে পাথরগুলো আর ঝিলিক দিচ্ছে—
এটাই সেই স্থিরতা আমরা দু'জনেই যা ভালোবাসি।
অপরূপের প্রেমই অন্তিম প্রেম।
.
.
* লুইজ ক্লুখ [২২ এপ্রিল ১৯৪৩ - ]:
২০২০ সালে কবিতার জন্য নোবেলজয়ী মার্কিন কবি।
.
●
#বাঙলায়ন: #রহমানহেনরী; #Bengalized by #RahmanHenry
.
.
#LouiseGlückPoems
** জার্মান ভাষায় এ কবির নাম: লুইজ এলিসাবেট ক্লুখ
শীতল হচ্ছে, এখানে ওখানে চকমক করছে পাথরগুলো আর ঝিলিক দিচ্ছে— এটাই সেই স্থিরতা আমরা দু'জনেই যা ভালোবাসি। অপরূপের প্রেমই অন্তিম প্রেম।// অপরূপের প্রেমই অন্তিম প্রেম। দুর্দান্ত