সংসার
মাধবী বন্দ্যোপাধ্যায়
আমার ছেলেবেলার সংসারটা ছিল ঘরের এক কোণায়
সংসারেরটুকিটাকি বলতে থাকত
চিকচিকের লজেন্সের মোরক, বিয়ের নিমন্ত্রন কার্ড, মাটির ভাঁড়,
পুঁতির মালা, কাঁচের চুড়ি, নারকেলের মালা
আর ঠাকুমার হাতে গড়া মাটির একটি ছেলে পুতুল আর একটি মেয়ে পুতুল
বড় যত্নের ছিল ঐ সংসারটা।
অরুণা যদি একটা পুঁতিতে হাত লাগাত তো
তার সাথে আড়ি হয়ে যেত
ঝগড়া ঝাঁটি আড়ি ভাবের সংসারটায় থাকতে থাকতেই
কখন যেন ঐ সংসারটা থেকে বেরিয়ে ও এসেছি- -
ঐ সংসারকে ভুলেও গেছি,
গড়েছি আর এক নুতন সংসার
সে সংসারে থাকত-শরত চন্দ্র, বঙ্কিম চন্দ্র, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়,
রামকৃষ্ণ কথামৃত, তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ, রামায়ণ, মহাভারত
সুচিত্রা-উত্তমের সিনেমার টিকিট, সেক্ষপীয়র, ওয়ার্ডস ওয়ার্থ,
ঘুড়ি, কাঁচি, সূতো, লাটাই, গুলি ইত্যাদি ইত্যাদি।
বেশ ছিলাম সে সংসারে
কাজের থেকে সেখানে বেশি ছিল কল্পনা
কিছুদিন পর মনে হতে লাগল শুধু ভাবের আসরে দিন যায় না
বাস্তব হাত ছানি দেয় -টাকা কড়ির বড় দরকার
এরপর একদিন ঢুকে পড়লাম এক বৃহত্তর সংসারে
এসংসারের প্রথম পদক্ষেপ একটি চাকুরি
দ্বিতীয় পদক্ষপ-সবাই বলে এটাই নাকি আসল সংসার
আর এ সংসারে সবকিছুই বড় বড়
বড় বাড়ি বড় গাড়ি বড় ঘর বড় খাট বড় আলমাড়ি
এখানে নাকি সবাই আপনজন
এখানে খেলাটাও বেশ বড় ঝগড়া ঝাটিও বেশ বড়
আমার তো মনে হয় -যখন যে সংসারে প্রবেশ করেছি
সেটাকে মনে হতো আসল সংসার।
কিছুদিপরেই সব খেলা খেলা মনে হয়েছে
আর নিজের মনে হেসেছি।
কিছুদিন তো বড় সংসার করার পর
এ সংসারটাকেও কেমন খেলা খেলা মনে হয়
মনে হয় কেহই আপন নয়
একদিন এ সংসারটাকেও ভুলে যাবছেড়ে যাব
ঠিক ছেলেবেলার পুতুলের সংসারের মতো।
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem