সূফিত্বের চর্চাগুলোর প্র্যাক্টিক্যাল উদাহরণ: :মানবতার পথ দেখানোর জন্য সুদীর্ঘ প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি: :মেষপালন এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেন?
- - -
‘প্রত্যেক নবী ছিলেন মেষপালক, আমিও মেষপালক।'- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
১. ভাবনার সুযোগ:
-
তরুণ বয়সে মেষপালককে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একা থাকতে হয়। মেষপালকদের তখন ভাবার জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা সময় থাকে, এই সময়টা তাঁরা একই বিষয় নিয়ে শত শতবার, হাজার হাজার বার ভাবতে পারেন। মনের ভিতর একই মডেল শতশতবার গড়লে এবং ভাঙলে সেখান থেকে শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি উঠে আসবেই।
২. নিজের ভাবনাকে নিজের মনে স্থায়ী রূপ দেয়ার সুযোগ:
-
আর সবার ভাবনা যখন সমাজের সাথে ওঠানামা করে এবং সমাজের সাথেই বয়স বাড়ার সাথে সাথে একটা জায়গায় স্থির হয়, তাঁরা সেখানে তরুণ বয়সেই, মনে কোনও ধারণা বদ্ধমূল হওয়ার আগেই প্রচুর ভেবে নিজের মত ধারণাকে পিউরিফাই করে নেন, এবং পিউরিফাইড ধারণাকে বদ্ধমূল করার সুযোগ পান।
৩. একের প্রতি মমত্ব'র বদলে অনেকের প্রতি মমত্ব'র সুযোগ:
-
এটা ভয়ানক গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট। সমাজে থাকা নতুন মানুষ সাধারণত মমত্ব (আপন মনে করে ভালবাসা)দেখায় কার প্রতি? নিজের বাবা-মা, পরিবার, আত্মীয়, বন্ধু বা বড়জোর দু একটা পোষা প্রাণী।
এইতো একজন শিশুর মমত্ব গড়ে ওঠার মাধ্যম? একটা শিশু সমাজে বড় হয়ে উঠতো সিলেক্টিভ মমত্ব দেখাতে দেখাতে। গিভ অ্যান্ড টেকের মমত্ব। অনেকটা আই লাভ চিকেনের মত। ফলে তার ভিতরে মমত্ব ও স্বার্থ কে আলাদা করার সুযোগ থাকতো না।
অপরদিকে একজন রাখাল শিশু একই সাথে ২০-৫০ টা প্রাণীকে একই প্রকার মমত্ব দেখাতে বাধ্য হতো। তার এই মমত্বের সাথে স্বার্থ'র বদলে দায়িত্ব যুক্ত হতো। এভাবেই সে অভ্যস্ত হয়ে উঠতো চিরদিন।
এই নন-সিলেক্টিভ মমত্ব, যা একটা পূর্ণ পপুলেশনের প্রতি আরোপিত হতো, এটা তাদের একটা একক জনগোষ্ঠীকে স্বপ্রীতি'র উপরে উঠেও ভালবাসার সাথে চালিত করার প্রধান হাতিয়ার ছিল।
৪. একই সাথে অনেক স্বাধীন প্রাণকে নিয়ন্ত্রণ, পরিচলন ও শাসনের সুযোগ:
-
কখনো তার শাসন করতে হতো একটা প্রাণীকে, কখনো কয়েকটা, কখনো একই সাথে পুরো পালকে। এবং প্রতিদিন, প্রতি ঘন্টায়, প্রতিক্ষণ তাকে এই কাজে সফল হতেই হতো। কোনও দ্বিতীয় অপশন নেই, কোনও এস্কেপ রুট নেই। এক বা একাধিককে বা পুরো একটা পালকে একই সাথে যে কোনভাবে শাসন করে নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে তার কোনও চয়েস নেই। তাকে এটা করতেই হবে। প্রতিবার। যে কোনভাবে। প্রতিদিন। একদিন, দুদিন, তিনদিন। শাসনের প্রতিটা ধরণ তার ভিতরে পোক্ত হয়ে গড়ে উঠতো।
৫. জৈবিক চাহিদাগুলো ও সেসব চাহিদার ফলে উদ্ভুত সমস্যাগুলোকে গভীরভাবে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণের ও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ:
-
প্রাণীদের ক্ষুধা, তৃষ্ণা, প্রজন্মায়ন, তাপ, ঠান্ডা, বিশ্রাম, ক্লান্তি, অসুস্থতা- এই প্রতিটা বিষয় তারা অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেতো।
এরচে ভয়ানক কথা হল, ক্ষুধা কীভাবে একটা একক প্রাণকে বদলে দেয়, তৃষ্ণা কীভাবে পুরো পালকে বদলে দেয়, অসুস্থতা কীভাবে কোনও প্রাণীর আচরণ বদলে দেয়, শক্তিশালী কীভাবে প্রতিনিয়ত আরো শক্তিশালী হয়, দুর্বল কীভাবে আরো দুর্বল হয়, আর জৈবিক চাহিদায় কীভাবে প্রাণীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং তাদের বেপরোয়া ভাব আবার কীভাবে নির্বাপিত হয়- এসবকিছু শুধু দেখা নয় বরং তা নিয়ন্ত্রণ করতে করতে একটা প্রাণীপালে সুস্থ সাম্যাবস্থা কীভাবে সব সময় বজায় রাখতে হয় তা কঠিন অপছন্দনীয় বাস্তবতার ভিতর দিয়ে শিখতে শিখতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে করতে জৈবিক সমস্যাগুলো প্রাকৃতিকভাবে সমাধানের পাথওয়েগুলো তাদের মনে স্থায়ী রূপ পেতে শুরু করে।
মেষপালন এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেন? -২
- - -
‘আমাকে পাঠানো হয়েছে কেবল বনী ইস্রাঈলের পথভ্রান্ত ভেড়াগুলোকে পথ দেখানোর জন্য।'- বাইবেলে উল্লিখিত ঈসা আ.'র কথিত বাণী।
৬. সময়, উদ্ভিদ ও জড়জৎকে পর্যবেক্ষণের, তাদের পারস্পরিক গতিপ্রকৃতি অনুধাবনের ও তা থেকে সিদ্ধান্তগ্রহণের সুযোগ:
-
একজন রাখাল শিশু চাক বা না চাক, ভাল লাগুক বা মন্দ লাগুক, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর তাকে বাধ্য হয়ে শুধুশুধু চেয়ে থাকতে হতো সূর্য, চাঁদ, তারা, প্রহর, ঘন্টা, বাতাস, পানি, মাটি, বৃষ্টি, বজ্রপাতের দিকে। প্রতিটা দিনের আসা যাওয়া, প্রতিটা ঋতুর আসা-যাওয়া থেকে সে লক্ষ্য করতো কীভাবে সেসবের প্রভাব পড়ে বীজের উপর, চারাগাছের উপর, বৃহৎ বৃক্ষের উপর, গাছে বাসা বাঁধা পাখির উপর, হেঁটে চলা ক্ষুদ্র একটা পিঁপড়া বা পোকার উপর। সে লক্ষ্য করতো কীভাবে এই বিষয়গুলো তার পুরো পশুপালকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করে, কীভাবে প্রভাবিত করে তাকে।
সে যখন পশুবৃত্তি বা নাফসানিয়াতের সবগুলো ধাপ বুঝে উঠেছে তার পশুপালকে পর্যবেক্ষণ করে, সে যখন মানুষের মধ্যে জৈববৃত্তির প্রভাবের মাত্রা বিস্ময়ের সাথে বুঝে উঠতে শুরু করেছে, তখনি নাফসানিয়াতের সাথে আলমিয়াত বা পুরো পরিবেশ ও প্রকৃতির পারস্পরিক ভাল ও মন্দ যোগাযোগও অনুভব করে উঠছে।
৭. নির্জনতার সুযোগ:
-
ভাবনার বাইরেও নির্জনতার সুযোগ একটা বিশাল ব্যাপার। মানুষের মস্তিষ্ক এত বেশি শক্তিশালী যে, কোনও মানুষ যদি নির্জনতার সুযোগ পায়, তবে তার মস্তিষ্কের কর্মকাঠামো অত্যন্ত সমৃদ্ধ হবে।
প্রত্যেক নবী-রাসূল আ. এমনকি প্রত্যেক সূফি ও আবিদ ভয়ানক নির্জনতার ভিতর দিয়ে গেছেন। এইযে আধ্যাত্ম্যসাধনা- এটা আসলে আত্মসাধনা। নিজেকে চেনা তো পরের কথা, নিজেকে বিকশিত করার একমাত্র মাধ্যম হল পরম নির্জনতা।
৮. কথা না বলার সুযোগ:
-
মানুষের জন্য কথা বলা হল নিজেকে প্রকাশ করার সবচে শক্তিশালী মাধ্যম। মানুষ যখনি নিজেকে প্রকাশ করতে পারে, তখন সাধারণত তার ভাবনার পেছনের চলমান শক্তিমত্তাটা কমে আসে। এবং সে অন্যের মতগুলোও ধারণ করতে থাকে। কথাকে সবচে পরিশুদ্ধ ও শক্তিশালী করার মাধ্যমই হল কথাকে নিয়মিত একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য রুদ্ধ করা।
সূফিদের জন্য তাই সাওমের পূর্বরূপ, নিরবতা এক অতি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
((help taken from Golam Dastagir Lisani ))
pic Google search
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem
A beautiful poem on mespalan having haunting and impressive expression with great theme. Thanks for sharing.
thank you very-much